• ১লা নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৬ই কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

ফরম পূরণের সময় বাড়লেও সেই ০৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা এখনো অনিশ্চিত

admin
প্রকাশিত মে ১৯, ২০২১, ১৮:২২ অপরাহ্ণ
ফরম পূরণের সময় বাড়লেও সেই ০৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষা এখনো অনিশ্চিত

ফরম পূরণ করতে না পারা কয়েকজন শিক্ষার্থী।

 

এসএসসির ফরম পূরণের সময় বাড়লেও সাতক্ষীরার দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সেই ০৭ শিক্ষার্থীর পরীক্ষায় অংশগ্রহণ এখনো অনিশ্চিত। প্রধান শিক্ষকের অপেশাদারিত্ব আর প্রতিহিংসার কারণে এই ০৭ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার বরাবর ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা লিখিত অভিযোগ দিলেও দায়সারা বক্তব্য দিয়ে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা না নিয়েই দায়িত্ব সেরেছেন সাতক্ষীরা জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন।

করোনা মহামারীর কারণে এবছর শিক্ষা মন্ত্রাণালয় থেকে নির্বাচনী পরীক্ষা ছাড়াই সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীর ফরম পূরণের নির্দেশনা দেওয়া হলেও সরকারি সে নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে একদিন ‘আকস্মিক’ নির্বাচনী পরীক্ষা নেন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান। অথচ পরীক্ষার দিন স্কুলে আসার আগ পর্যন্তও কোন শিক্ষার্থী ওই নির্বাচনী পরীক্ষার বিষয়ে অবগত ছিলেন না। সেদিন তড়িঘড়ি করে স্কুল থেকে খাতা এবং কলম সরবরাহ করে করোনা মহামারীর তোয়াক্কা না করেই একসাথে তিন বিষয়ের পরীক্ষা নেওয়া হয়। ওইদিন পরীক্ষায় অংশ নিতে না পারা শিক্ষার্থীদের পরে আবার প্রধান শিক্ষকের বাড়িতে ডেকে নেওয়া হয় নির্বাচনী পরীক্ষা। শিক্ষা মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশনা অমান্য করে নেওয়া সেই ‘আকস্মিক নির্বাচনী পরীক্ষা’র ফলের উপর ভিত্তি করেই এই ০৭ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ আটকে দিয়েছেন প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসান।

এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসানের ভাষ্য, যে ০৭ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না তারা খুবই দুর্বল মানের স্টুডেন্ট। নির্বাচনী পরীক্ষায় তারা খুবই কম নাম্বার পেয়েছে। তাদেরকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে দিলে তারা নিশ্চিত ফেল করবে। পাশের হার সরকারি নীতিমালার নিচে আসলে দীর্ঘ ১৮ বছর পর এমপিওভুক্ত হওয়া স্কুলটির এমপিও বাতিল হতে পারে। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষ কোনো রকম ঝুঁকি নিয়ে ওই ০৭ জনকে পরীক্ষার হলে পাঠাতে চান না।

এখন প্রশ্ন হল শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে নেওয়া অবৈধ নির্বাচনী পরীক্ষার ফলের উপর ভিত্তি করে ০৭ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন ঝুঁকির মধ্যে ফেলা কতটা যৌক্তিক? ক্ষণিকের জন্য ওই প্রধান শিক্ষকের যুক্তি মেনে নিলেও সাত শিক্ষার্থীর লেখাপড়ায় দুর্বল হওয়ার দায় কি শিক্ষকদের উপর বর্তায় না? আবার এসএসসি পরীক্ষার আগ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীদেরকে নিবিড় পরিচর্যা করলে তারা কি পাশ করার উপযোগী হয়ে উঠবেনা?

যে পরীক্ষা নেওয়ারই কথা নয় সে পরীক্ষায় নম্বর কম পাওয়া আর স্কুলের এমপিও বাতিল হওয়ার ঝুঁকির অজুহাত দিয়ে ফরম পূরণ করতে না দেওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন সাতক্ষীরা সদর উপজেলার লাবসা ইউনিয়নের দেবনগর গ্রামের অরবিন্দ সরকারের ছেলে সবুজ সরকার, একই এলাকার প্রসাদ সরকারের মেয়ে মৌ সরকার, সিন্ধু সরকারের মেয়ে তিথী সরকার, নারায়ণপুর গ্রামের মো. আবদুল মালেকের ছেলে আবদুর রহমান, ভাটপাড়া গ্রামের শাহজান দালালের ছেলে ই¯্রাফিল ইসলাম, আখড়াখোলা গ্রামের সিদ্দিক গাজীর ছেলে মামুন, দেবনগর গ্রামের আমজেদ হোসেনের ছেলে আল-মামুন।

ফরম পূরণ করতে না পারা শিক্ষার্থী সবুজ সরকার বলেন, আমরা পরীক্ষার হলে বসার আগ পর্যন্তও জানতাম না যে এবার নির্বাচনী পরীক্ষা হবে। হঠাৎ একদিন আমাদের স্কুলে ডেকে স্কুল থেকেই খাতা-কলম দিয়ে পরীক্ষা দিতে বলা হয়। সেদিন অর্ধেকের মতো শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিয়েছিলো। বাকিদের পরে আবার একদিন হেড স্যারের বাড়িতে ডেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়।

আরেক শিক্ষার্থী মৌ সরকার জানান, আমরা যদি এতোই খারাপ স্টুডেন্ট হবো তাহলে আমরা দশম শ্রেণিতে কি করে উত্তীর্ণ হলাম। নিশ্চই পরীক্ষায় পাস করেই আমরা উত্তীর্ণ হয়েছি।

ফরম পূরণ করতে না পরা শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা ধারণা করছেন তাদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেওয়ার জন্য শিক্ষকরা ফরম পূরণ করা নিয়ে তালবাহানা করছে।

এদিকে দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অনৈতিক সুবিধা নিয়ে স্থানীয় অন্যান্য স্কুলের শিক্ষার্থীদের এই স্কুল থেকে এসএসসি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। জানা গেছে দেবনগর বেগম রোকেয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এবছর দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী ৩৫ জনের মতো কিন্তু এর থেকে প্রায় দ্বিগুন শিক্ষার্থীর শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করা হয়েছে এই স্কুল থেকে।

এসব অভিযোগের ব্যাপারে জানার জন্য প্রধান শিক্ষক মেহেদী হাসানের কাছে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি। অন্যদিকে সহকারী প্রধান শিক্ষক সাইফুল আলম ফোন রিসিভ করলেও সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর কোন তথ্য না দিয়েই দ্রæত ফোন কেটে দেন।

এ ব্যাপারে জেলা শিক্ষা অফিসার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আমি ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষকসহ সকল শিক্ষকদের নিয়ে মিটিং করেছি। তাদেরকে আমি ওই ০৭ শিক্ষার্থীর ফরম পূরণ করে দিতে বলেছি। মিটিং-এ তারা ওই শিক্ষার্থীদের ফরম পূরণ করে দেওয়ার ব্যাপারে পজেটিভ ছিলো। পরে খোঁজ পেলাম তারা এখনো ফরম পূরণ করেননি।

এ ব্যাপারে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর খুলনার উপ-পরিচালক ফারহানা নাজ বলেন, শিক্ষা মন্ত্রাণালয় এবং বোর্ডের নির্দেশনার বাইরে যাওয়ার কোন সুযোগ নাই। যা করতে হবে নির্দেশনা মেনে করতে হবে। এবার যারাই রেজিষ্ট্রেশন করেছে সবার ফরম পূরণ করতে হবে।