আজ || শুক্রবার, ১৮ অক্টোবর ২০২৪
শিরোনাম :
  সাবেক ছাত্রলীগ ক্যাডার দুর্নীতিবাজ সাইফুলকে জেলা প্রশাসক পদ থেকে প্রত্যাহারের দাবি       টানা তিন জয়ে শ্রীলঙ্কাকে সিরিজ হারাল বাংলাদেশ       মৃত দাদির জন্য খাটিয়া বহনকালে ট্রাকের ধাক্কা, নাতিসহ নিহত ৩       বিএসএফের গুলিতে নিহত জয়ন্তর মরদেহ ফেরত       গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ       পরিকল্পনা বদলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে ৬টি প্লট দেয় রাজউক       পেট্রোবাংলায় তিতাসের কর্মীদের হামলা-ভাঙচুর       সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত       ফকিরহাটে পিকআপ-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪       ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসএফের গুলিতে জয়ন্ত কুমার নামে বাংলাদেশির মৃত্যু    
 


‘অভিযোগ পেলেই কেবল ব্যবস্থা’

রিয়াদ হোসেন :

১. কখনও সিটি কর্পোরেশনের জামা গায়ে আবার কখনওবা শ্রমিক সংগঠনের লগো লাগিয়ে সড়ক-মহাসড়কে চলছে চাঁদাবাজি। হাতে লাঠি কিংবা নিষিদ্ধ লেজার রশ্মি মেরে থামানো হচ্ছে গাড়ি। এরপর স্থানীয় প্রভাবশালী বা শ্রমিক নেতাদের নিজেদের তৈরী করা কাগজ হাতে দিয়ে নেওয়া হচ্ছে টাকা। দিতে অস্বীকার করলে চড়াও হয়ে গাড়ির কাচ ভাঙছে তারা। কখনও চালককে নিচে নামিয়ে এনে পিটিয়ে আহত করা হচ্ছে। তাদের কাছে এই টাকা নেওয়ার কারন জানতে চাইলে কোন সদুত্তর মিলছে না। অনেকে বলছে দৈনিক মজুরিতে তারা এ কাজ করে থাকেন। এভাবে প্রতিনিয়ত কিছু প্রভাবশালী শ্রমিক নেতা আর ট্রাফিক পুলিশের যোগসাজশে চলছে প্রকাশ্যে-অপ্রকাশ্যে মহাসড়কে চাঁদাবাজি। ফলস্বরূপ পরিবহন খরচ বাড়ায় বাজারে বাড়ছে কাঁচামাল থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির দাম।

২. নৌপথে নৌ-পুলিশের হাতে প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার হচ্ছে নৌ-শ্রমিকরা। পুলিশকে কিছু না দিয়ে চলে না নদী পথে মাছধরা কোন ট্রলার কিংবা নৌকা। অনেক সময় সরাসরি টাকার দাবি না করলেও বলা হয় মিষ্টি খাওয়ার জন্য ‘কিছু’ দেন। ভাসমান জোয়ার আসর আর ডাকাতি প্রতিরোধ করতে এসে হয়রানির আসর বসানোর অনেক অভিযোগ দেখতে পাওয়া যায় নৌপথের নিরাপত্তায় কাজ করা এসমস্ত কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে। দেখা গেছে, দুর্নীতির সাথে যুক্ত এসমস্ত নৌ পুলিশকে জনবান্ধব হওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকতাদের থেকে। কিন্তু দিন শেষে তাদের এ কর্মকান্ড থেকে যাচ্ছে অপরিবর্তিত।

৩. ভোগান্তিহীন নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়তে বাংলাদেশ রেলওয়ে দিনের পর দিন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। তবে রেল পথে সেবার মান নিয়ে এখনও বেশকিছু অভিযোগ রয়েছে যাত্রীদের। যা কতৃপক্ষের উদাসীনতাই দিনের পর দিন ঘটে চলেছে। অনিয়ম-দুর্নীতি আর অবব্যবস্থাপনায় এ সেক্টরে সরকারের নানামুখী উন্নয়ন পরিকল্পনা ভেস্তে যাচ্ছে। এর পিছনে রেল পুলিশ ও রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) অন্যতমভাবে দায়ী। তাদের স্বজনপ্রীতি আর দুর্নীতির প্রভাবে রেল সেক্টর আরো বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাদের এসমস্ত অবৈধ কাজের বৈধতা নিশ্চিত করতে দুর্নীতিতে যুক্ত হচ্ছে রেল সেক্টরের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

উপরের তিনটা ঘটনার সাধারণ বর্ণনা দেওয়া হয়েছে। তিনটি ঘটনাই বোঝা যাচ্ছে, অনিয়ম-দুর্নীতির সাথে যুক্ত হয়ে পড়ছে দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। শুধু তারা নয় সরকারি বিভিন্ন দপ্তরে কর্মকর্তা কর্মচারীদের ঘুষ, স্বজনপ্রীতির কারনে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষের। কিন্তু এভাবে আর কত? এই ধারাবাহিকতায় শুধু দেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী কেন, শতবর্ষ পালন করলেও কি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা গড়ে তোলা সম্ভব হবে? প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুখী, সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে? হয়তো না উঠার’ই কথা। কারন দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ বাণিজ্য আর অবৈধ কাজের মধ্যে দেশ পরিচালনাকারীরা নিমজ্জিত হলে এ দেশ সোনার বাংলা হয়ে উঠার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

একটু ভাবলেই দেখতে পাবেন, উপরে বর্নিত তিনটি ঘটনা নিয়ে যদি কোন ভুক্তভোগী সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানান তাহলে সেখান থেকে প্রতিউত্তরে কিছু না আসলেও চলে আসবে ‘অভিযোগ পেলেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে’–কথাটি। বলা হবে, আমরা এমন কোন বিষয় জানতে পারিনি কিংবা আপনার মাধ্যমে জানলাম। বিষয়টি নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে তদন্ত করে আইনানুগ গতিক ব্যবস্থা গ্রহন করবো। এবার ভাবুন, ঘটনা–১ এ যে মানুষটা ট্রাক ভর্তি কাঁচামাল নিয়ে কোন জেলা শহর থেকে রাজধানীতে উঠছে সে ওই পরিস্থিতিতে ৮০ কিংবা ১০০ টাকা চাঁদার কথা কোথায় অভিযোগ করবে? কিভাবে করবে? আর অভিযোগ করতে গেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে তো হয়রানি আছেই। তাহলে প্রতিটি ট্রাকে চালকের কাছে অল্প টাকা করে গেলেও দিনশেষে রাত আর রাতশেষে দিনে সর্বমোট কতগুলো টাকা অবৈধভাবে সড়কপথে দেওয়া লাগছে ভেবে দেখুন তো! পর্যায়ক্রমে যদি ঘটনা–২ এবং ৩ লক্ষ করেন তাহলে দেখবেন, কোন মানুষ কিংবা গণমাধ্যমকর্মীরা যখন বিষয়টি সংশ্লিষ্ট উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে জানাবেন তখন একই ধারায় তাদের মন্তব্য আসবে। অভিযোগ পেলে তারা ব্যবস্থা নিবেন। তাহলে কি অভিযোগ পত্র পাবার আসায় তারা বসে থাকেন? আর যতক্ষণ পাবেন না ততক্ষণে এ দুর্নীতি চলতে থাকবে? প্রকৃতপক্ষে এর সমাধান কোথায় সেটা খুব মানুষের জানার কথা নয়। আর নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে তার তদন্ত কমিটির দেওয়া প্রতিবেদন যে আলোর মুখ দেখে এমন ঘটনাও বিরল। শুধু বর্নিত তিনটি ঘটনা নয়, প্রায় সব জায়গায় এই বাক্যটি শোনা যায় উর্ধ্বতন কর্মকতাদের কাছ থেকে। কিন্তু এ বাক্য বলেই তাদের দায়িত্ব শেষ হয় না, তারা এড়িয়ে যেতে পারে না। এর সমাধান প্রয়োজন। দেশ যেভাবে উন্নয়নের মহাড়কে চলছে তাতে এ ধরনের দায়িত্বশীলদের কাজে অবহেলা আর অভিযোগ পত্র পাবার পরে ব্যবস্থা নেওয়াটা খুব বেমানান মনে হয়। এই নীতি থেকে বেরিয়ে সব অন্যায়, দুর্ণীতি থেকে মুক্তি পেয়ে বর্তমান প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার সুখী সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ গড়ে উঠবে– এমনটাই প্রত্যাশা রইল।

লেখক: রিয়াদ হোসেন, শিক্ষার্থী,
সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা৷,সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক,তালা জার্নালিস্ট এসোসিয়েশন।


Top