নারীর কথিত ছোট পোশাকের বিরুদ্ধে আপত্তি তুলে সম্প্রতি কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কিছু শিক্ষার্থীর মানববন্ধনের তীব্র সমালোচনা করেছেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি।
মন্ত্রী বলেছেন, আধুনিক বিশ্বে যখন রোবোটিক্স আর আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কথা বলার সময়, তখন কিছু গোষ্ঠী নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য মাপতে ব্যস্ত।
যারা ইসলামের কথা বলে নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য মাপেন, তারা তাদের সন্তানের বিয়েতে গায়ে হলুদের আয়োজন কেন রাখেন- সে প্রশ্নও ছুড়েছেন তিনি।
সচিবালয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সোমবার শিক্ষাবিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন এডুকেশন রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বাংলাদেশের (ইরাব) সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এ বিষয়ে কথা বলেন মন্ত্রী।
দীপু মনি বলেন, ‘আমরা বিভিন্ন জায়গায় এক ধরনের সাম্প্রদায়িক আচরণ দেখছি। বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইদানীং…কিছুদিন আগে একবার টিপ নিয়ে এক ধরনের কথা ওঠে। এখন হঠাৎ করে আবার নারী শিক্ষার্থীদের পোশাক নিয়ে কথা হচ্ছে।’
মন্ত্রী দাবি করেন, এই বিষয়গুলো বাংলাদেশে মীমাংসিত।
তিনি বলেন, ‘মীমাংসিত বিষয়গুলোকে কারা কাদের স্বার্থে, কোন স্বার্থে অমীমাংসিত করছে এবং কারা এগুলো নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন উত্থাপন করছে?
‘বিশ্ব এগিয়ে যাচ্ছে, সমাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা এখন রোবোটিক্স নিয়ে কথা বলব, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স নিয়ে কথা বলব। এখন তো নারীর পোশাকের দৈর্ঘ্য নিয়ে কথা বলার সময় না। কপালে টিপ আছে কি নেই—এটা নিয়ে প্রশ্ন হতে পারে না।’
একজন ব্যক্তিকে ধর্মের পরিচয়ে আলাদা করে মাপার সুযোগ নেই বলেও মনে করেন দীপু মনি।
তিনি বলেন, ‘আমি আগে বাঙালি নাকি আগে মুসলমান—এটি কোনও প্রশ্নের বিষয় না। আমি বাঙালিও, আমি মুসলমানও। সমস্যাটা কী?’
মধ্যপ্রাচ্যে মুসলমানরাও উলুধ্বনি দেয় উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের এই ভূখণ্ডে সনাতন ধর্মের মানুষ উলুধ্বনি দেয়। এগুলো সাংস্কৃতিক অনুষঙ্গ। এই যে বিয়েতে গায়ে হলুদ হয়, এটা মুসলিম বিয়ের কোন অংশ বলেন? কোথায়? খালি তো কবুল পড়া, সাক্ষ্য দেয়া ও দোয়া পড়া। তার বাইরে মুসলিম বিয়েতে আর তো কিছু নেই।
‘যারা ইসলাম-ইসলাম করে পাগল করে ফেলছেন, এইটার দৈর্ঘ্য এত হতে হবে, এইটার প্রস্থ এত হতে হবে—এটা নিয়ে যারা বলেন, আমরা তো দেখি তাদের ছেলে-মেয়ের বিয়েতে গায়ে গলুদ হচ্ছে, সবই হচ্ছে।’
এসব সংস্কৃতির অংশ উল্লেখ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘সংস্কৃতি মানব, কিন্তু টিপ দেয়ার সংস্কৃতি মানব না, ছেলেমেয়েরা গান শিখবে, কবিতা আবৃত্তি করবে, সেটাকে মানব না—এ দ্বিচারিতার কোনো অর্থ নেই। সমাজে এই দ্বিচারিতা কারা নিয়ে আসছে, কারা সেটিকে প্রমোট করছে, সেটি কিন্তু আমরা সবাই জানি। আমরা মুখ ফুটে বলি না।’
আর এসবকে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া হিসেবে দেখতেও নারাজ তিনি।
দীপু মনি বলেন, ‘আমি গণতন্ত্র বলব; গণতন্ত্র মানে যদি হয় ওই ধর্মকে অপব্যবহার করে মানুষের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা, পূজার সময় গিয়ে প্রতিমা ভেঙে দিয়ে আসা, তাহলে আমাদের ওই রকম গণতন্ত্রের মধ্যে জীবনযাপন করতে হবে।
‘আমি যদি আমার সমাজে অসাম্প্রদায়িকতা চাই, আমি যদি সবার অধিকার চাই, সবার কথা বলার অধিকার চাই, সবার স্বাধীনভাবে চলার অধিকার চাই; তাহলে এটার সঙ্গে ওই কূপমণ্ডূকতা, কুসংস্কার ও পশ্চাৎপদতা যায় না।’