সুশান্ত কি বলিউডের রাজনীতির শিকার?

খুলনার চিত্র ডেস্কঃ
  • প্রকাশিত : মঙ্গলবার, ১৬ জুন, ২০২০

গভীর অভিমান আর হতাশা নিয়ে কেরিয়ারের মধ্যগগণেই পৃথিবী ছেড়ে চলে গেছেন বলিউড অভিনেতা সুশান্ত রাজপুত। কিন্তু তিনি জন্ম দিয়ে গেছেন কিছু প্রশ্নের। যার উত্তর হয়তো কোনো দিনও মিলবে না। সোমবার অভিনেতার মরদেহের ময়নাতদন্তের প্রতিবেদনে স্পষ্ট জানিয়ে দেয়া হয়েছে, গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন সুশান্ত।

রবিবার বলিউডের উঠতি এ তারকার মৃত্যুসংবাদ প্রকাশ্যে আসার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়া ভরে যায় শোকবার্তায়। ইন্ডাস্ট্রির নামী-অনামীর ভার্চুয়াল বার্তার মিছিলে নজর কেড়েছিল পরিচালক ও প্রযোজক করণ জোহারের পোস্ট। সুশান্তের মৃত্যুর দায় তিনি নিজের কাঁধে খানিকটা নিয়ে নেন। যদিও ওই পোস্টের কারণে ট্রোলড হয়েছেন করণ। তবে তার অজান্তেই পোস্টটি উসকে দিয়েছে গম্ভীর প্রশ্ন, করণের অপরাধবোধের কারণ কী?

এই প্রশ্নের উত্তর মেলার আগেই সোমবার দুপুরে পরিচালক শেখর কাপুরের করা একটি টুইট ওই প্রশ্নচিহ্নকে আরও জোরালো করেছে। সুশান্তের উদ্দেশে শেখর টুইটে লিখেছেন, ‘আমি জানি, কাদের জন্য তোমার এই হতাশা। গত ছয় মাসে যদি তোমার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারতাম। যা হয়েছে সেটা ওদের কর্মফল, তোমার নয়।’ নাম উহ্য থাকলেও শেখরের পোস্ট ইশারা করছিল বলিউডের অন্দরের কোনও গোপন সত্যির দিকে।

বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেই ইঙ্গিতকে জনসমক্ষে তার নিজস্ব ভঙ্গিতে তুলে ধরেন অভিনেত্রী কঙ্গনা রানাউত। একটি ভিডিওয় কঙ্গনার বিস্ফোরক মন্তব্য, ‘বলিউডের ইতিহাস লিখতে যারা উচ্চাকাঙ্ক্ষী, তারা দুর্বলচিত্ত হিসেবে সুশান্তকে দেখাতে চায়। ‘গাল্লি বয়’-এর মতো খারাপ ছবি পুরস্কৃত হয় কিন্তু ‘ছিছোরে’র জন্য সুশান্তকে সম্মান দেয়া হয়নি। তবে সুশান্তের ভুল, ওকে যারা প্ররোচিত করেছে, ও তাদের কথা মেনে নিয়েছে।’

অভিনেত্রীর যুক্তি, এটা কি পরিকল্পিত খুন নয়? আবার কঙ্গনার উল্টো মেরুতে সোনম কাপুরের অবস্থান। তিনি টুইট করে লিখেন, ‘একজনের মৃত্যুর জন্য তার বান্ধবী, প্রাক্তন বান্ধবী, সহকর্মীদের দায়ী করা জঘন্য কাজ।’

গত কয়েক মাসে নিজের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষার সঙ্গে বাস্তবকে মেলাতে পারছিলেন না সুশান্ত। তার শেষ ইনস্টাগ্রাম পোস্টে তা স্পষ্ট। কেরিয়ারে সাফল্য পেলে, বলিউডের মতো লাভ-সর্বস্ব ইন্ডাস্ট্রির অভ্যন্তরীণ রাজনীতি হয়তো অভিনেতার মানসিকতায় বিরূপ প্রভাব ফেলেছিল। শোনা যায়, কেরিয়ারের শুরুর দিকে যশ রাজ ফিল্মসের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ থাকায় তার হাতছাড়া হয়েছিল সঞ্জয় লীলা বানসালির ‘রামলীলা’।

সঞ্জয় নিজেই নাকি যশ রাজের কাছে অভিনেতাকে নেয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সুশান্তকে ছাড়া না হলেও তখন যশ রাজের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ রণবীর সিংকে ছবিটি করার অনুমতি দেয়া হয়েছিল। এর পরে আদিত্য চোপড়ার পরিচালনায় ‘বেফিকরে’ ছবিটি করার কথা ছিল সুশান্তের। কিন্তু সেটাও চলে যায় রণবীরের সিংয়ের কাছে।

যশ রাজ ফিল্মসের তরফ থেকে সুশান্তকে দেয়া হয় ‘পানি’ নামে একটি ছবি, যার পরিচালনা করার কথা ছিল শেখর কাপুরের। রবিবারের পোস্টে এই ছবির কথা উল্লেখ করেন শেখর। কিন্তু বছর দুয়েক পরে প্রজেক্টটি স্থগিত করে দেয় যশ রাজ। পর্যায়ক্রমিক ভাবে এই ঘটনাগুলো হওয়ার পরে আদিত্যের সঙ্গে সুশান্তের মনোমালিন্য বাড়তে থাকে বলে শোনা যায়। যার জেরে সুশান্তকে মাশুল দিতে হয় বলে ইন্ডাস্ট্রির একাংশের ধারণা। বিগত বছর দেড়েক তাকে কোনও ফিল্মি পার্টিতে আমন্ত্রণ করা হত না।

অন্যদিকে করণ জোহারের প্রযোজনায় সুশান্ত অভিনীত ‘ড্রাইভ’ নেটফ্লিক্সে মুক্তি পায়। তবে ছবির ডিজিটাল রিলিজ় প্রসঙ্গে সুশান্তকে জানানো হয়নি। আদিত্যের সঙ্গে ঝামেলার সময়েই করণের সঙ্গেও নাকি দূরত্ব বাড়ে সুশান্তের।

ছবি পাওয়া, ছবির হস্তান্তর, বড় ব্যানারের চোখের মণি হওয়া- ইন্ডাস্ট্রির হিসেবনিকেশের অংকের মাঝে প্রতিভার জোরেই জায়গা করেছিলেন সুশান্ত। তবে নামী প্রযোজনা সংস্থায় নাম টিকিয়ে রাখতে হয়তো আপস করতে চাননি। যার জন্যই ভক্তদের উদ্দেশে তিনি বলেছিলেন, ‘আমার ছবি না দেখলে ওরা আমাকে তাড়িয়ে দেবে। তোমরাই তো আমার গডফাদার।’ সূত্র: আনন্দবাজার

সংশ্লিষ্ঠ আরও খবর