সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া এবং সহযোগী সংস্থা উত্তরণের বাস্তবায়নে ‘সফল’ প্রকল্প নেদারল্যান্ডস দূতাবাসের আর্থিক সহায়তায় সাতক্ষীরা থেকে নিরাপদ হিমসাগর আম রপ্তানীর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার (২১ মে) সকালে সাতক্ষীরা সদর উপজেলার মাধবকাটি ছয়ঘরিয়া এলাকার হাফিজুর রহমানের আম বাগানে সরকারি নিয়ম অনুসারে হিমসাগর আম পেড়ে রপ্তানির কার্যক্রমের আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাতক্ষীরার কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোঃ নূরুল ইসলাম, জেলা বিপনন কর্মকর্তা সালেহ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ, উপজেলা নির্বাহী অফিসার জুবায়ের হোসেন চৌধুরী, উপজেলা কৃষি অফিসার রফিকুল ইসলাম, উত্তরণ সফল প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ ইকবাল হোসেন, সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র প্রোগ্রাম অফিসার-সাপ্লাই চেইন মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। এ সময় ৪ হাজার কেজি হিমসাগর আম বুলবুল হোসেন-এনএইচবি কর্পোরেশন ও নাজমুল হোসাইন-তাশফিক ইন্টার ন্যাশনাল বায়ারের প্রতিনিধির মাধ্যমে ইতালি ফেনি ফুড রোমের বাংলা এসআরএলে পাঠানো হয়।
নিরাপদ আম উৎপাদন ও বাজারজাত করনে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এস এম মোস্তফা কামাল বলেন, রপ্তানীর ধারাবাহিক কার্যক্রম জামলি দিয়ে আম পেড়ে গ্রেডিং, সটির্ং, প্রসেসিং, প্যাকেজিং, পরিবহনসহ সামগ্রিক কার্যাবলি স্বাস্থ্যসম্মত। সেই সাথে কৃষিসম্পসারণ অধিদপ্তরের সহযোগিতায় সফল প্রকল্পের মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চল থেকে নিরাপদ স্বাস্থ্যসম্মত আমসহ অন্যান্য সবজির ধারাবাহিক রপ্তানী কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ সময় তিনি আরও বলেন, ভাল পরিবেশ এবং নির্ধারিত ১৪ জন বায়ারের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকলে এই করোনা কালীন সময়েও প্রায় ৫০০ মে.টন বিভিন্ন জাতের আম রপ্তানি করা যাবে।
সাতক্ষীরা কৃষি অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ নুরুল ইসলাম বলেন, খুলনা, সাতক্ষীরা, বাগেরহাট, যশোর ও নড়াইল জেলার ১৮,৩১২ জন সবজি ও ফল উৎপাদনকারী কৃষকের নিরাপদ সবজি উৎপাদন বৃদ্ধি ও টেকসই বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে ২০১৩ সাল থেকে উত্তম কৃষি চর্চার মাধ্যমে নিরাপদ সবজি উৎপাদন ও বাজারজাতকরনে কৃষকদের দক্ষতা উন্নয়নে সলিডারিডাড ও উত্তরন সফল প্রকল্প কাজ করে চলেছে। তারই ফলশ্রুতিতে আজ শুক্রবার বিষমুক্ত নিরাপদ আম দেশের গন্ডি পেরিয়ে ইউরোপীয় মহাদেশে সাতক্ষীরার সুস্বাদু আম রপ্তানি হ”েচ্ছ।
সলিডারিডাড নেটওয়ার্ক এশিয়া’র প্রোগ্রাম অফিসার-সাপ্লাই চেইন মোস্তাফিজুর রহমান এবং উত্তরণ সফল প্রকল্পের প্রজেক্ট ম্যানেজার মোঃ ইকবাল হোসেন বলেন, সফল প্রকল্পের কৃষকেরা ২০১৪ সাল থেকে দেশীয় বাজার, আন্তর্জাতিক বাজার, জাতীয় বাজার এবং বিভিন্ন সুপার চেইন শপে (যেমন- আগোরা, স্বপ্ন, গ্রীন বাজার ইত্যাদি) নিয়মিতভাবে সবজি ও ফল সরবরাহেব পাশাপাশি কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তর এর কারিগরি সহযোগিতায় ২০১৬ সাল থেকে সাতক্ষীরা জেলা থেকে আম রপ্তানী ও ২০১৮ সাল থেকে যশোর জেলা হতে বাংলাদেশ ফ্রুটস, ভেজিটেবলস এন্ড এ্যালাইড প্রোডাক্টস এক্সপোর্টারস এসোসিয়েশন (বিএফভিএপিইএ) এর মাধ্যমে সবজি রপ্তানী শুরু করে । এ পর্যন্ত ৮৪.৭৪ মে. টন আম (যার বাজারমূল্য ৬৩,৬৮,৮৪২ টাকা) এবং ১২৭০ মে.টন সবজি (যার বাজারমূল্য প্রায় ৫,২৩,১৭,৯১৫.২৮১ টাকা) সফল প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানী হয়েছে। এ সকল সবজির মধ্যে বাঁধাকপি, পটল, পেঁপে, লাউ, চিচিঙ্গা, ধুন্দল, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, বেগুন, সীম ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য এবং আমের মধ্যে হিমসাগর, ল্যাড়া ও আ্যম্রপালি উল্লেখযোগ্য।
এছাড়াও গত ডিসেম্বর’২০২০ থেকে কলারোয়া উপজেলা হতে সব্জি রপ্তানির কার্যক্রম শুরু হয় এবং এ যাবত মোট ১০.২৬ মে টন সব্জি ও কুল বরই যার বাজার মূল্য-২,৯৮,৮০৭ টাকা, বিভিন্ন বায়ার যেমন -তাশফীক ইন্টারন্যাশনাল, আর আর এন্টারপ্রাইজ, ভুইয়া কর্পোরেশন, লিএন্টারপ্রাইজ, ফ্রেশ ভেজিটেবলস, এনএইচবি কর্পোরেশন ইত্যাদি এর মাধ্যমে ইতালি, ফ্রান্স, জার্মানী ও মালেশিয়ায়র্ প্তানি করা হয়। সব্জি রপ্তানির ব্যপারে বায়ারদের বেশ চাহিদা আছে।
উল্লেখ্য, সলিডারিডাড ও উত্তরণ কতৃক বাস্তবায়িত ‘সফল’ প্রকল্পের ৫০০ জন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত দক্ষ আম চাষীর কাছ থেকে এ বছর গোবিন্দভোগ আম রপ্তানি কাযক্রম শুরু হয় ৮ মে। এছাড়াও ১৯ মে কলারোয়া হতে ১৬০০ কেজি হিমসাগর আম আল মদিনা জেনারেল ট্রেডিং এর মাধ্যমে বাহারাইনে রপ্তানি করা হয়।