অভিনয় শুরু পর একাধিক বার প্রেমে এসেছে সদ্য প্রয়াত বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের জীবনে। ‘পিকে’ তারকা প্রথমবার মন দেয়া-নেয়া সেরেছিলেন টিভি তারকা অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে। অতীত বলছে, জি টিভির ‘পবিত্র রিস্তে’ ধারাবাহিকে অভিনয়ের মাধ্যমে মুম্বাইয়ে পা রাখেন মেধাবী ইঞ্জিনিয়ার সুশান্ত। তার পরেই সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন ওই ধারাবাহিকের নায়িকা অঙ্কিতা লোখান্ডের সঙ্গে। তাদের প্রেম ভীষণ নজর কেড়েছিল সে সময়। একে তো দুজনেই নতুন, তারপর আবার একে অন্যের অনুপ্রেরণাও হয়ে উঠেছিলেন।
কিন্তু অঙ্কিতার সঙ্গে সুশান্তের ব্রেক আপ হয়েছে দুই বছর আগে। সেই ব্রেক আপের কারণ এখনো অজানা। এই দুই বছরে অনেকটা বদলে গিয়েছিলেন দুজনেই। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর, সুশান্তের সঙ্গে বিচ্ছেদের পর থেকে বিকাশ জৈন নামে এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে চুটিয়ে প্রেম করছেন অঙ্কিতা। সম্প্রতি নাকি তারা বিয়ের তোড়জোড়ও শুরু করেছেন। অন্যদিকে গেল দুই বছরে সুশান্তের সঙ্গে নাম জড়িয়েছে একাধিক অভিনেত্রীর। তাদের মধ্যে দুজন হলেন কৃতি শ্যানন এবং সারা আলি খান।
এর মধ্যে কৃতি শ্যানন হলেন সুশান্তের ২০১৭ সালে মুক্তি পাওয়া ‘রাবতা’ ছবির নায়িকা। আর সারা আলি খানের বিপরীতে তিনি অভিনয় করেছেন ২০১৮ সালে ‘কেদারনাথ’ ছবিতে। যদিও এই দুই নায়িকার সঙ্গে সুশান্তের সম্পর্কের তেমন কোনো সত্যতা মেলেনি। সবটাই ছিল গুঞ্জনের পর্যায়ে। সবশেষ সুশান্তের সঙ্গে যার নাম জড়িয়েছে, তিনি হলেন অভিনেত্রী রিয়া চক্রবর্তী। বেঙ্গালুরুতে বেড়ে ওঠা বাঙালি মেয়ে। সুশান্তের জীবনে তিনি এসেছিলেন শেষ বসন্ত হয়ে। কিন্তু সুশান্তের মৃত্যুর পর আজ তিনি কোথায়?
মিডিয়াকে পুরোপুরি এড়িয়ে চলছেন রিয়া। তার ফোন বন্ধ। অথচ তার ইনস্টাগ্রাম বলছে, সুশান্তের মৃত্যুর দিন সকালেও স্যাসি ভিডিও পোস্ট করেছেন প্রোফাইলে। পিৎজা বানিয়েছেন মায়ের সঙ্গে। কিন্তু প্রেমিকের জীবনে যে ঝড় উঠেছিল তা কি এক বারের জন্যও টের পাননি রিয়া? নাকি সম্পর্কটাই আর ছিল না দুজনের মধ্যে? এরকম অনেক প্রশ্নই উঠছে বারে বারে। কে এই রিয়া চক্রবর্তী? কী তার পরিচয়? কেন সুশান্তের মৃত্যুতে বারে বারে উঠে আসছে ২৭ বছর বয়সী এই মেয়ের নাম?
পেশায় অভিনেত্রী রিয়ার বাবা ভারতীয় সেনাবাহিনীতে চাকরি করতেন। সৈনিক পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। তাই রিয়ার ছোটবেলা কেটেছে ভারতের নানা প্রান্তে। পড়াশোনা করেছেন হরিয়ানার আম্বালার আর্মি পাবলিক স্কুলে। অভিনয়ে আসার ইচ্ছা ছিল ছোট থেকেই। ২০০৯ সালে এমটিভি আয়োজিত এক রিয়্যালিটি শোতে বিজয়ী হয়ে বিনোদন জগতে হাতেখড়ি হয় রিয়ার। এরপর তেলুগু ছবি দিয়ে তার অভিনয় জীবনের শুরু।
রিয়ার বলিউডে অভিষেক ২০১৩ সালে। ছবির নাম ‘মেরে ড্যাড কি মারুতি।’ ধীরে ধীরে ‘সোনালি কেবল’, ‘দোবারা’ সমেত বেশ কিছু হিন্দি ছবিতে অভিনয় করেন রিয়া। এই সময়ে পরিচালক ও প্রযোজক মহেশ ভাটের সঙ্গে তার প্রেমের গুঞ্জন ছড়ায় বলিউডের অন্দরে। অসমবয়সী এই প্রেম নিয়ে কম কথা হয়নি বলিপাড়ায়। অভিনেত্রী আলিয়া ভাটের বাবা মহেশ ভাটকে নিয়ে রিয়া বলেছিলেন, ‘উনি আমার শিক্ষক। ওনাকে আমি শ্রদ্ধা করি।’
কিন্তু একসঙ্গে কাজ না করা সত্ত্বেও সুশান্তের সঙ্গে রিয়ার পরিচয় কী করে হল? কীভাবেই বা সেই পরিচয় পরিণতি পেল প্রেমে? বলিউড তা জানে না। দুজনের কেউই আগে বিনোদন জগতের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। উঠে এসেছিলেন সাধারণ পরিবার থেকে। এমনও হতে পারে, তাই হয়তো অন্য কোনো সমীকরণ কাজ করেছিল দুজনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে।
২০১৮ সালে ‘কেদারনাথ’ মুক্তির পর যখন সারা আলি খান আর সুশান্তের প্রেম নিয়ে খুব গুঞ্জন বাজারে, ঠিক সেই সময়ে সবাইকে অবাক করে গত বছরের জুনে রিয়ার সঙ্গে লাদাখ ঘুরতে যান সুশান্ত। যদিও লাদাখ থেকে একসঙ্গে ছবি দেননি তারা। প্রথমে ভক্তরা অতটা ঠাওর করতে না পারলেও দুজনের একসঙ্গে লাদাখ যাওয়াটা যে নেহাতই কাকতালীয় নয়, তা বুঝতে বাকি ছিল না কারও।
তার ঠিক কয়েক মাস পর, অক্টোবরের মাঝামাঝি চুপিচুপি প্যারিস পাড়ি দিয়েছিলেন সুশান্ত-রিয়া। সে খবরও চাউর হতে বেশি সময় লাগেনি। তার পরেই জোর গুঞ্জন। এর পরে কখনো রেস্তোরাঁ, আবার কখনো বা জিমে একসঙ্গে দুজনেই ধরা পড়তে লাগলেন পাপারাৎজির ক্যামেরায়। মুখে ‘উই আর জাস্ট ফ্রেন্ডস’ বলে কাটিয়ে দিলেও সুশান্ত-রিয়ার প্রেম নিয়ে তখন তোলপাড় বলিউড।
ওদের লাভ স্টোরি যেন মান্যতা পায় গত ২১ জানুয়ারি। সুশান্তের ৩৪ তম জন্মদিনে। তামাম দুনিয়াকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে প্রায় খোলাখুলি সুশান্তের সঙ্গে প্রেমকে প্রকাশ্যে আনেন রিয়া। ইনস্টাগ্রামে দুজনের আদরের ছবি পোস্ট করে রিয়া লেখেন, ‘মাই ক্রেজি ডায়মন্ড’। অতঃপর সম্পর্কে শিলমোহর। এরই মাঝে খবর আসে, সম্পর্কে নাকি চিড় ধরেছে তাদের। একসঙ্গে আর নেই তারা। শোনা যাচ্ছিল, সুশান্তের পর পর কয়েকটা ছবি ফ্লপ হওয়াই নাকি এর জন্য দায়ী।
তবে সে সমস্তকে মিথ্যে প্রমাণ করে গত ১১ মার্চ মুম্বাইয়ের এক জিমের সামনে দুজনে একসঙ্গে ধরা দেন ক্যামেরার লেন্সে। জনসমক্ষে রিয়া আর সুশান্তকে ওই শেষ বার দেখা গিয়েছিল। এরপর ভারতে শুরু হয়ে যায় লকডাউন। ঘরবন্দি হয়ে পড়েন তারকারা। সুশান্ত আর রিয়ার প্রেমেও কি অশনি সঙ্কেত হয়ে দাঁড়ায় এই লকডাউন? বান্দ্রার ফ্ল্যাটে একা থাকতেন সুশান্ত। মা মারা গেছেন কয়েক বছর আগে। বাবা দিল্লিতে। দিন দিন যে হতাশার অন্ধকারে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তার বিন্দুমাত্র আঁচও কেন পেতে দেননি রিয়াকে?
কী বা হল ১১ মার্চের পর? কথা বলাও কি বন্ধ করে দিয়েছিলেন তারা দুজন? উঠে আসছে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন? সাবেক নারী ম্যানেজারের আত্মহত্যার চার দিন পর সুশান্তের মৃত্যু, ‘বয়ফ্রেন্ড’-এর মৃত্যুর পরেও রিয়ার হাসিখুশি ইনস্টাগ্রাম পোস্ট। এসব কোন রহস্যের ইঙ্গিত? প্রশ্ন অনেক, উত্তর অজানা। চারদিকে জট পাকিয়ে যাওয়া এক থমথমে রহস্য। মাত্র ৩৪ বছরেই জীবন থেমে গেল সুশান্তের। তার জীবনের শেষ ভালোবাসা হয়ে রয়ে গেলেন বাঙালি মেয়ে রিয়া চক্রবর্তী!