পুলিশের ভাষ্যমতে বলিঊড তারকা সুশান্ত সিংহ রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। কিন্তু তার ভক্তরা তা এখনো মেনে নিতে পারেননি। আবার কোনো কোনো তারকা খোলাখুলি বলছেন, সুশান্তকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিয়েছে বলিউডেরই একটি গোষ্ঠী। এর মাধ্যমে তাকে আসলে খুন করা হয়েছে।
এটি অপমৃত্যু, হত্যা, নাকি আত্মহত্যা? প্রেমে ভাঙন না বলিউডের স্বজনপোষণের নির্মম শিকার সুশান্ত? মৃত্যুর আগের শেষ দিনগুলো কেমন ছিল সুশান্তের?
বলিউড সেলিব্রিটিরা নানা ছুতোনাতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব থাকেন সব সময়। সেখানে গত ছয় মাস ধরে টুইটার ছুঁয়ে দেখেননি সুশান্ত। সর্বশেষ গত বছরের ডিসেম্বরে টুইটারে পোস্ট দেন সুশান্ত। তা হলে কি আস্তে আস্তে গুটিয়ে নিচ্ছিলেন নিজেকে?
সুশান্ত শেষবার ক্যামেরায় ফ্রেমবন্দি হন গত ১১ মার্চ। ইনস্টাগ্রামের শেষ পোস্ট দেন ৩ জুন। সেখানে শুধু মাকে নিয়ে আবেগমাখা কথা। টুকরো স্মৃতি, চোখের জল। কিশোরবেলায় মাকে হারানোর কান্নাই যেন ঝরে সেই পোস্টে।
শোনা যাচ্ছে, গত কয়েক মাসে ছয়টি বিগ বাজেটের ছবি হাতছাড়া হয়েছে সুশান্তের। করণ জোহর থেকে আদিত্য চোপড়া, বলিউডের তথাকথিত গডফাদাররা একে একে মুখ ফেরাচ্ছিলেন তার দিক থেকে। দেড় বছর ধরে ডাক পাননি কোনো ফিল্মি পার্টিতেও।
পরিচালক মহেশ ভাটের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করা লেখিকা সুচরিতা সেনগুপ্ত সুশান্তের জীবনের শেষ কিছু দিনের কয়েকটি ঘটনা প্রকাশ্যে এনেছেন। মহেশ ভাট নাকি সুশান্তকে দেখেই বলেছিলেন, এ তো আর এক পারভিন ববি। প্রেমিকা রিয়া চক্রবর্তীকে নাকি সুশান্ত থেকে দূরে থাকার পরামর্শও দিয়েছিলেন ভাট।
রিয়াকে অবলম্বন করে বাঁচতে চেয়েছিলেন সুশান্ত। বলতেন, অনুরাগ কাশ্যপ নাকি তাকে মেরে ফেলতে চাইছেন। নিজের মনগড়া ভয়ে নিজেই ডুবে থাকতেন সব সময়। সুচরিতা বলছেন, রিয়াও ভয় পেয়েছিলেন একটা সময়। তাই সুশান্তের থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন প্রতিনিয়ত।
সুশান্তের ঘরে পাওয়া গিয়েছে অবসাদ কাটানোর একগাদা ওষুধ। সেই সঙ্গে এ-ও জানা গিয়েছে, দিদি এবং রিয়া বারবার তাকে ওষুধ খেতে বললেও মুখ ফিরিয়ে নিতেন তিনি।
বাড়ির পরিচারক জানান, শেষ কয়েকটা দিন নাকি একেবারেই কথা বলতেন না সুশান্ত। নিজের ঘরে বসে থাকতেন চুপচাপ। ইনস্টা বলছে, পার্থিব জগতের সান্নিধ্য না পেয়ে সুশান্তের অশান্ত মন শরণ নিয়েছিল ঈশ্বরকে। সংস্কৃত শ্লোক শেয়ার করে তাতে মিলিয়ে দিতেন বিজ্ঞানকে। মারা যাওয়ার দিন কয়েক আগে রিয়া এ রকমই এক পোস্ট দেখে অভিভূত হয়ে কমেন্ট করেছিলেন, ‘অ্যামেজিং’।
মৃত্যুর আগের দিন ১৩ জুন রাত ১টার দিকে রিয়াকে ফোন করেন সুশান্ত। ওপাশ থেকে কোনো সাড়া পাননি। এরপর ফোন করেন বন্ধু মহেশকে, যিনি প্রথম থেকে সুশান্তের পাশে ছিলেন। এই রাতে তারও সাড়া পাননি সুশান্ত।
১৪ জুন সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ পরিচারক বেদানার রস দিয়ে যান সুশান্তকে। সুশান্ত আবার মহেশকে ফোন করার চেষ্টা করেন। কিন্তু ফোন লাগে না। (পরে পুলিশ সুশান্তের ফোন ঘেঁটে সে কথা জানাতেই কান্না চাপতে পারেননি মহেশ।)
বেলা প্রায় সাড়ে ১০টা। দুপুরে কী খাবেন জানতে সুশান্তের ঘরে ঢুকতে গিয়ে পরিচারক দেখেন দরজা বন্ধ। সেদিন রাতে আরও এক বন্ধু ছিলেন সুশান্তের বাড়ি। তিনি বেলা ১১টা নাগাদ ঘুম থেকে উঠে সুশান্তের খোঁজ করতেই জানতে পারেন দীর্ঘ সময় দরজা বন্ধ থাকার কথা। খবর যায় সুশান্তের দিদির কাছে। খবর দেওয়া হয় চাবি বাননোর মিস্ত্রিকেও। দিদি আসেন। আসেন লক খোলার মিস্ত্রিও।
ভাঙা হয় দরজা। ওপারে তখন ঝুলছে সুশান্তের নিথর দেহ। (সূত্রঃ আনন্দবাজার।)