কোভিড-১৯ মহামারীর হটস্পট ব্রাজিলে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার বেড়েই চলেছে।যুক্তরাষ্ট্রের পরই মৃত্যুতে শীর্ষে থাকা দেশেটিতে ইতিমধ্যে ৫০ লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন।তবু এই মহামারীকে গুরুত্ব দিচ্ছেন না দেশটির খোদ প্রেসিডেন্ট জাইর বলসোনারোর।
তিনি লকডাউনের বিরোধী, এমনকি কোনো বিধিনিষেধ মানার বালাই তাই তার। সংক্রমণের মধ্যেও তিনি লোক সমাগম করে বেড়াচ্ছেন। মিত্র যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মত মাস্ক পরা বিরোধী তিনিও।
তবে এবার বলসোনারোর মাস্ক পরা ছাড়া চলাফেরাতে ইতি টেনে দিয়েছে ব্রাজিলের একটি আদালত। অতি ডানপন্থী এই প্রেসিডেন্টকে জনসমাগমে আসার সময় অবশ্যই মাস্ক পরার নির্দেশনা দিয়েছেন বিচারক।
মঙ্গলবার ফেডারেল বিচারক রেনেতো বোরেল্লি এ নির্দেশনা জারি করেন। তা অমান্য করলে দিন প্রতি বলসোনারোকে ২ হাজার রেইস (৩৮৭ ডলার) জরিমানা করারও নির্দেশনা দেন বিচারক।
আদেশে বলা হয়েছে, ব্রাজিলের প্রেসিডেন্টকে কোভিড-১৯ সংক্রমণ এড়াতে সব ধরনের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। তার নিজের স্বাস্থ্যের পাশাপাশি আশেপাশের অন্যান্যদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্যও এটি প্রয়োজন।
প্রেসিডেন্ট নিয়ম ভঙ্গ করলে তাকে দৈনিক ২ হাজার রেইস জরিমানা দিতে হবে। একই নিয়ম প্রযোজ্য হবে অন্যান্য সরকারি কর্মকর্তাদের ক্ষেত্রেও।
ব্রাজিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা প্রতিদিনই লাফিয়ে বাড়ছে। মৃত্যু ৫২ হাজার ৬৪০ জনে দাঁড়িয়েছে; আর আক্রান্ত সাড়ে ১১ লাখ ছুঁই ছুঁই।
জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাবমতে, বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ব্রাজিলে এখন শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ১১ লাখ ছাড়িয়ে গেছে। মারা গেছে ৫১ হাজারেরও বেশি মানুষ।
ব্রাজিলে করোনাভাইরাসের এই মহামারি নিয়ন্ত্রণে না আসার অন্যতম কারণ অতি ডানপন্থী প্রেসিডেন্ট জাইর বোলসোনারোর উদাসীনতা। তার দাবি, করোনা সামান্য ফ্লু জাতীয় রোগ। গণহারে মাস্ক পরা ও লকডাউন আরোপের বিরোধীও তিনি।
লকডাউন নিয়ে প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দ্বন্দ্বে মন্ত্রিত্ব ছাড়তে হয়েছে দুই স্বাস্থ্যমন্ত্রীর।এখনও স্থায়ী স্বাস্থ্যমন্ত্রী পায়নি ব্রাজিল।
করোনাভাইরাস সঙ্কটের মধ্যে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার পদক্ষেপের চেয়ে ব্রাজিলের অর্থনীতি সুরক্ষায় জোর দেওয়া নিয়ে রাজ্য গভর্নরদের সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়িয়েছেন বোলসোনারো। ‘কিছু লোক মারা যাবে এটিই জীবন। এজন্য কারখানা বন্ধ করা যায় না’ বলেও মন্তব্য করেছিলেন তিনি।
এপ্রিলে বোলসোনারোকে একবার কাশতে কাশতেও হাজির হতে দেখা যায় লকডাউন-বিরোধী বিক্ষোভে। মুখে কোনো মাস্ক না পরে, হাতে গ্লাভস না পরেই বিক্ষোভ-সমাবেশে হাজির হন বোলসোনারো।
এ পরিস্থিতির মধ্যেও বোলসোনারো বরাবরই মাস্ক ছাড়া জনসমাবেশে যাচ্ছেন এবং লোকজনের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করছেন। বিভিন্ন সমাবেশ এবং অনুষ্ঠানে দেখা যাচ্ছে তিনি কাশছেন, সর্দি ঝাড়ছেন এবং পরক্ষণেই মানুষের সঙ্গে হাত মেলাচ্ছেন।