শিরোনাম
নির্বাচন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত : বিএনপিকে নিষেধাজ্ঞা কেন দেওয়া হচ্ছে না, প্রশ্ন ওবায়দুল কাদেরের মালয়েশিয়ায় ভবন ধসে ৩ বাংলাদেশি শ্রমিকের মৃত্যু, নিখোঁজ ৪ সারা দেশে ১৫৯ প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাবের ৪২৮ টহল দল মোতায়েন পাবনায় অবরোধের সমর্থনে বিএনপির মিছিল বাংলাদেশের চেয়ে ২৩২ রানে পিছিয়ে বিরতিতে নিউজিল্যান্ড কয়রায় পুকুর থেকে যুবকের লাশ উদ্ধার ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি খোকনের ওপর হামলা, পিটিয়ে পুলিশে দিলো ছাত্রলীগ নড়াইল ১ আসন : আ.লীগ প্রার্থীর স্ত্রী নিলেন স্বতন্ত্র মনোনয়ন নগর আ’লীগের বর্ধিক সভায় দুই নেতার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দিনের শুরুতে বাংলাদেশের জোড়া সাফল্য

মানব পাচার : যুক্তরাষ্ট্রের তালিকায় বাংলাদেশের উন্নতি

খুলনার চিত্র ডেস্কঃ
  • প্রকাশিত : শনিবার, ২৭ জুন, ২০২০

মানব পাচার পরিস্থিতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের বার্ষিক প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানের উন্নতি ঘটেছে, যার কারণ হিসেবে পরিস্থিতির উন্নয়নে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কথা বলা হয়েছে। ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ শীর্ষক বার্ষিক এই প্রতিবেদনে গত তিন বছর বাংলাদেশকে রাখা হয়েছিল দ্বিতীয় স্তরের ‘নজরদারিতে থাকা দেশের’ তালিকায় (টায়ার-টু ওয়াচ লিস্ট)। ২০২০ সালের প্রতিবেদনে বাংলাদেশকে নজরদারিতে থাকা দেশের তালিকা থেকে বাদ দিয়ে দ্বিতীয় স্তরের দেশের তালিকায় উন্নীত করা হয়েছে।

দ্বিতীয় স্তরে থাকার অর্থ হল, পাচার নির্মূলের লক্ষে ন্যূনতম মান এখনও বাংলাদেশ অর্জন করতে পারেনি, তবে তা অর্জনে সরকার উল্লেখযোগ্য ও ক্রমবর্ধমান প্রচেষ্টা নিচ্ছে। পুরোপুরি এই মান অর্জন এবং পাচার পুরোপুরি বন্ধ করতে আরো কাজ বাকি রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন এ্যাক্টস’ এর ন্যূনতম মান এখনও বাংলাদেশ পূরণ করতে পারেনি, তবে সেই মান পূরণের জন্য গত এক বছরে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ সরকার নিয়েছে।

ব্রাজিল, ডেনমার্ক, জার্মানি, গ্রিস, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, ইতালি, জাপান, নেপাল, পোল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, থাইল্যান্ড, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও এবারের প্রতিবেদনে দ্বিতীয় স্তরে রাখা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও বৃহস্পতিবার রাতে চলতি বছরের ‘ট্রাফিকিং ইন পারসন’ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন।

এর প্রতিক্রিয়ায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন শুক্রবার এক ভিডিও বার্তায় বলেন, “এটা আমাদের জন্য বড় একটি সুখবর।”

মানব পাচার পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই প্রতিবেদনে দেশগুলোকে তিনটি স্তরে ভাগ করে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

এর মধ্যে যেসব দেশ পাচার বন্ধে ‘কার্যকর’ ব্যবস্থা নিয়েছে অর্থাৎ, ট্রাফিকিং ভিকটিমস প্রোটেকশন এ্যাক্টস এর ন্যূনতম মান পূরণে সক্ষম হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, সেসব দেশকে প্রথম স্তর বা টায়ার-ওয়ান-এ রাখা হয়।

দ্বিতীয় স্তর বা টায়ার-টু কে আবার দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে- টায়ার-টু এবং টায়ার-টু ওয়াচলিস্ট। সবশেষে রয়েছে তৃতীয় স্তর বা টায়ার-থ্রি।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে বলা হয়, গুরুত্বপূর্ণ যে পদক্ষেপগুলোর কারণে মানব পাচার প্রতিরোধে বাংলাদেশের পরিস্থিতির অগ্রগতি হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে সাতটি মানব পাচার ট্রাইব্যুনাল গঠন এবং বিদেশে কাজের জন্য যেতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের ‘শোষণকারী’ নিয়োগ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ।

রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলার এবং যুক্তরাষ্ট্রের মানবপাচার পর্যবেক্ষণ ও মোকাবেলা বিষয়ক এ্যাম্বাসেডর অ্যাট লার্জ জন কটন রিচমণ্ড এক যৌথ বিবৃতিতে বলেন, “পাচারকারীদের বিচারের মুখোমুখি করতে এবং ভুক্তভোগীদের মুক্তি নিশ্চিত করতে অক্লান্তভাবে লড়াই করে চলা বাংলাদেশ সরকার এবং নাগরিক সংগঠনগুলোকে আমরা অভিনন্দন জানাই। মানব পাচারের বিরুদ্ধে বিশ্বের এই যুদ্ধে তারা বাংলাদেশের হিরো।”

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সরকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে মানবিক কর্মসূচি চালানোর সুযোগ অব্যাহত রেখেছে। তবে মানব পাচার বন্ধে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখনও যথেষ্ট উন্নতি দেখাতে পারেনি। মানব পাচার নিয়ে তদন্ত আগের চেয়ে কমে গেছে, রোহিঙ্গাদের শ্রম দিতে বাধ্য করা এবং যৌনকর্মী হিসেবে পাচার করার শত শত অভিযোগে কোনো ধরনের তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি।

শিশুদের যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করার বহু অভিযোগ থাকলেও সরকার সেই ভিকটিমদের চিহ্নিত করার বা অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখার ‘উদ্যোগ নেয়নি’ বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তর।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পাচারের শিকার হয়ে সৌদি আরবে শ্রম দিতে বাধ্য হওয়া সহস্রাধিক বাংলাদেশিকে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো খুঁজে বের করলেও সরকার তাদের পুনর্বাসন বা পাচারকারীদের বিরুদ্ধে কোনো ফৌজদারি তদন্তের উদ্যোগ নেয়নি।

অর্থ ও মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে আটক বাংলাদেশি সংসদ সদস্য শহিদ ইসলাম পাপুলের প্রসঙ্গও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিবেদনে এসেছে, যদিও তার নাম উল্লেখ করা হয়নি।

অভিযোগ রয়েছে, পাপুল কুয়েতে একটি মানব পাচার চক্র চালিয়ে আসছিলেন এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে তিনি ২০ হাজারের বেশি বাংলাদেশিকে সেখানে নিয়ে চুক্তির চেয়ে কম বেতনে কাজ করাচ্ছিলেন।

লক্ষ্মীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পাপুল কুয়েতের মারাফি কুয়েতিয়া কোম্পানির অন্যতম মালিক। সেখানে তার স্থায়ীভাবে বসবাসের অনুমতি রয়েছে।

পাচারের শিকার পাঁচ বাংলাদেশির অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৬ জুন রাতে কুয়েতের মুশরিফ এলাকা থেকে পাপুলকে গ্রেফতার করা হয়। তার বিরুদ্ধে মানবপাচার, অর্থপাচার ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের শোষণের অভিযোগ এনেছে কুয়েতি প্রসিকিউশন।

পাপুল ও তার কোম্পানির ব্যাংক হিসাবও ইতোমধ্যে জব্দ করেছে কুয়েত কর্তৃপক্ষ। কোম্পানির হিসাবে প্রায় ১৩৮ কোটি টাকা রয়েছে বলে এর আগে পাবলিক প্রসিকিউশনের বরাতে জানিয়েছিল কুয়েতি গণমাধ্যম।

সংশ্লিষ্ঠ আরও খবর