ক্রীড়া সাংবাদিকরা বিশ্বাস করেন সাংবাদিকতার সবথেকে রোমাঞ্চকর বিভাগ হচ্ছে ক্রীড়া সাংবাদিকতা।পত্রিকায় বা টেলিভিশনে কিংবা হালের অন লাইনেও ক্রীড়া বিভাগকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হয়। আর এই গুরুত্ব দেয়াটা তৈরি করে দিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিকরাই। একটা সময় পুরো পত্রিকায় মাত্র ২ কলাম খেলার নিউজ ছাপা হতো আর এখন ২ পাতা জুড়েই থাকে খেলা। ক্রীড়া সাংবাদিকরাই পাঠকের কাছে এই বিভাগের এই চাহিদা তৈরী করে দিয়েছেন। ফলে দিনে দিনে গুরুত্ব বেড়েছে ক্রীড়া সাংবাদিকতার। তাই এখন অনেকেই ক্যারিয়ার হিসেবে ক্রীড়া সাংবাদিকতাকেই বেছে নিচ্ছেন।
দেশের প্রেক্ষাপটে এই ভাবনা কেবল রাজধানী কেন্দ্রিকই। মফস্বলে কি কেউ পেশা হিসেবে ক্রীড়া সাংবাদিকতা বেছে নেয়ার দু:সাহস করবেন কি না কে জানে ..??
নিজের শহর খুলনা নিয়েই উদাহরণটা দেই…। আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১০ সাল থেকে ক্রীড়া সাংবাদিক আমি।শুরু থেকেই আমার প্রতিষ্ঠান দৈনিক সময়ের খবর আঞ্চলিক পত্রিকা হিসেবে খেলাধুলাকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছে। অল্প দিনেই খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত হয়ে উঠেছে দৈনিক সময়ের খবর পত্রিকা।আঞ্চলিক, জাতীয় আন্তর্জাতিক সব ধরনের খেলাধুলাকে গুরুত্ব দিয়েছে সময়ের খবর। পেয়েছি কাজের সর্বোচ্চ স্বাধীনতাও…। পত্রিকার মতো নিজেরও পরিচিতি বেড়েছে, সুনাম বেড়েছে, বেড়েছে অভিজ্ঞতা। এই সময়ে কাজ স্থানীয় খেলোয়াড়, ক্রীড়া সংগঠকদের সাথে কাজ করা যেমন হয়েছে, বিসিবি, বাফুফে কিংবা অন্যান্য ফেডারেশনের সাথেও কাজ করার সুযোগ হয়েছে। অনেক নামী সাংবাদিকের সাথে কাজ করার সুযোগ হয়েছে। পরিচয় হয়েছে। এসব জায়গায় নিজের কাজের জন্য অনেকবার প্রশংসাহ পেয়েছি। তবুও কি অর্থনৈতিকিভাবে নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে সন্তুষ্ট প্রকাশের সুযোগ পেয়েছি ..?? দু:খজনক হলেও আঞ্চলিক পত্রিকার বাস্তবাতায় সেটা সম্ভবও নয়। সেক্ষেত্রে আঞ্চলিক বা মফস্বল সাংবাদিকদের নির্ভর করতে হয় জাতীয় মিডিয়ার উপরে। সব ক্ষেত্রেই মফস্বল সাংবাদিকরা তাদের ক্যারিয়ার গঠন করেন ন্যাশনাল মিডিয়ার উপর নির্ভর করেই। সেখানে কি মফস্বল থেকে কারও ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়ার সুযোগ আছে…?? নেই …।
আপনি যদি মফস্বলেই থাকেন তাহলে আপনাকে সব নিউজই করতে হবে। আপনার কোন নির্দিষ্ট বিট বলে কিছু থাকবে না। তাহলে তো আর ক্রীড়া সাংবাদিক হওয়া যাবে না।
কিন্তু গত কয়েক বছরে বিভাগীয় শহর খুলনায় জাতীয় পর্যায়ে খেলাধুলার এত বেশী উপাদান ছিলো যে, জাতীয় মিডিয়া এখানকার নিউজকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে বাধ্য হয়েছে। গত কয়েক বছরে যেমন জাতীয় ক্রিকেট লিগ (এনসিএল), বাংলাদেশ ক্রিকেট লিগ (বিসিএল), অনূর্ধ্ব-১৯ দলের একাধিক সিরিজ, একাধিক ক্যাম্প, জাতীয় নারী ক্রিকেট দলের একাধিক ক্যাম্প, অনূর্ধ্ব-১৫ দলের একাধিক সিরিজ, বাংলাদেশ ‘এ’ দল ও এইচপি টিমের সিরিজও এখানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব খেলা বা ক্যাম্প ঢাকায় হলে যেভাবে নিউজ কাভার হতো, সেভাবে কিন্তু হয়নি। কারণ এখানে জাতীয় মিডিয়ার স্পোর্টসে কাজ করার মতো কেউ ছিলেন না। অনেক সময় দেখা যায়, জাতীয় লিগ কাভার করার জন্য ঢাকা থেকে প্রতিনিধি আসেন। অনেক সময় দেখা যায়, মাঠ থেকে আমরা সেরা পারফরমারের যে ইন্টারভিউ করি, ঢাকায় বসে অনেক সাংবাদিক ফোনেই সে সাক্ষাৎকার নিয়ে নেন।
তাই মফস্বলে ক্রীড়া সাংবাদিকতা কখনও পূর্ণ সাংবাদিকতা হয়ে উঠবে কি না সেই শঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। তবু নিজেকে একজন ক্রীড়া সাংবাদিক হিসেবে পরিচয় দিতেই গর্ববোধ করি। সবাইকে বিশ্ব ক্রীড়া সাংবাদিক দিবসের শুভেচ্ছা….