গাজী জাহিদুর রহমান:
তালা উপজেলার জাতপুর গ্রামের বিধবা কমলা দাসী। সতীনের ঘরের ২ ছেলেসহ ৪ ছেলে ও ২ মেয়ে রেখে ১৯৮৮ সালের ঝড়ের সময় মারা যান স্বামী পাগল দাস। সেই হতে কোলে পিঠে করে খেয়ে, না খেয়ে সন্তানদের বড় করে তুলেছেন তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন, ছেলেরাও বিয়ে করে আলাদা থাকেন। ছেলেরা ভ্যান চালিয়ে ও কামলা খেটে কোন রকম তাদের সংসার চালায়। তার ভরণ-পোষণের জন্য সন্তানরা মাঝে মাঝে কিছু খরচ দেন। অভাব-অনটনের সংসারে কমলা দাসী যেন ছেলের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছেন।
কমলা দাসী বলেন, ‘সরকার আমারে বিধবা ভাতা দেয় মাসে ৫০০ টাকা করি। তিন মাস পরপর এই টাকা তুলতি পারি। শুনি সকলের বেতন বাড়ছে, জিনিসপত্রের দাম বাড়ছে, কিন্তু আমার ভাতা বাড়তাছ না।’
দুঃখ করে তিনি বলেন, ‘মাসে ৫০০ টাকা দিয়ে একজন মানুষ কি করি চলবে! ৫০০ টাকা দিয়ে এখন ১০ কেজি চালও পাওয়া যায় না। তাছাড়া একখান ভাঙ্গা ঘরে থাই। ছাবালদের অবস্থা ভাল না, তাগির দিনও ঠিকমতো চলে না। মাঝে মাঝে অনেক অসুস্থ হইয়ে পড়ি, কয়দিন পরপর ওষুধ লাগে। এই ভাতা দিয়ে চাল কেনবো নাকি ওষুধ আনবো”। এ সময় তিনি ভাতার পরিমাণ কমপক্ষে এক হাজার টাকা বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আকুল আবেদন জানান।
তালা নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনীর আওতায় বয়স্ক, বিধবা ও স্বামী নিগৃহীতা নারীরা মাসে ৫০০ টাকা ভাতা পান। কয়েক বছর ধরে এই একই পরিমাণ ভাতা পাচ্ছেন তারা।
সরকারের কাছ থেকে তারা যে ভাতা পান, ১০ কেজি চাল কিনতেই তা শেষ হয়ে যায়। অর্থাৎ একজনের ১০ দিনের চালের খরচও হয় না এই টাকা দিয়ে। যাদের অন্য কোনো আয় নেই; কাজ করতে পারেন না, তাদের এই অল্প টাকা দিয়ে আসলে কিছুই হয় না। এসব ভাতার পরিমাণ কমপক্ষে ১ হাজার টাকা হলেও কিছুটা চলতো তাদের সংসার।
এ বিষয়ে তালা সদর ইউপি চেয়ারম্যান সরদার জাকির হোসেন বলেন, বেশ কয়েক বছর ধরে বিধবা ভাতা পান কমলা দাসী। তবে দরিদ্র কমলার পক্ষে মাসে ৫শ’ টাকায় সংসার চালানো বেশ কষ্ট হয়ে যায়। সামনে কোন সুযোগ থাকলে তাকে সাহায্য করা হবে বলে জানান তিনি।
তালা উপজেলা সমাজসেবা অফিসার সুমনা শারমিন এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে রাজি হননি।