আন্তর্জাতিক ডেস্ক
বিশ্বের বিভিন্ন দেশে লকডাউন শিথিলের পদক্ষেপ এবং ব্যবসা-বাণিজ্য চালুর চেষ্টার কারণে আরেক দফা করোনা মহামারির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বিভিন্ন দেশে চলমান বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভের কারণেও করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) সংক্রমণের হার বাড়তে পারে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে স্বাস্থ্য সংস্থাগুলো। খবর রয়টার্সের
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্যরা লকডাউনের বিধিনিষেধ শিথিল করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালু করার আহ্বান জানালেও সংস্থাটির স্বাস্থ্য কমিশনার স্টেলা কিরিয়াকাইডস বলেন, বিধিনিষেধ শিথিল করলেও পরিস্থিতি বিবেচনায় প্রয়োজন হলে ফের লকডাউনের প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
গত বছরের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহান থেকে করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে সংক্রমণ কমে আসায় লকডউন শিথিল করা হয়। খুলে দেওয়া হয় স্কুল-কলেজ ও বাজার। তবে দেশটিতে ফের সংক্রমণ শুরু হয়েছে। রাজধানী বেইজিংয়ে ফের দুইজন আক্রান্ত হয়েছেন। তারা গিয়েছেন এমন ছয়টি মার্কেট ফের বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ভারত মার্চে পুরো দেশ লকডাউন করে। টানা ৭০ দিন লকডাউনের পর তা থেকে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে দেশটি। দেশটিতে গণপরিবহন চালু করা হয়েছে।
তবে বিধিনিষেধ শিথিলের সঙ্গে সঙ্গে দেশটিতে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে করোনা সংক্রমণও। গত এক সপ্তাহে ভারতে প্রায় ১০ হাজার মানুষ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।
কোভিড-১৯ শনাক্ত রোগীর সংখ্যায় গত মঙ্গলবারই চীনের উহান শহরকে ছাড়িয়ে গেছে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের মুম্বাই শহর। প্রায় ১ লাখ শনাক্ত রোগী নিয়ে মহারাষ্ট্র এখন চীনের মোট ভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যাও ছাড়িয়ে গেছে।
বিশ্বে একক দেশ হিসেবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা সবচেয়ে বেশি যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটির অর্ধডজন রাজ্যই বাড়তে থাকা করোনা সংক্রমণ মোকাবিলায় হিমশিম খাচ্ছে। এখন পর্যন্ত সেখানে আক্রান্তের সংখ্যা ২০ লাখ ৪৯ হাজার ২৪ জন। আর মৃত্যু হয়েছে ১ লাখ ১৪ হাজার ৬৭২ জনের।
এমন পরিস্থিতির মধ্যেই গত মাসের শেষ দিকে মেমোরিয়াল ডে উদযাপনে অনেক মার্কিনিই সাগরতীর এবং লেকে গেছে। এতে করে দ্বিতীয় দফায় ভাইরাসের প্রকোপ বাড়ার শঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। সেইসঙ্গে কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েড হত্যা নিয়ে দেশজুড়ে শুরু হওয়া বিক্ষোভ-প্রতিবাদ সংক্রমণের শঙ্কা আরো বাড়িয়েছে।
তুরস্কের শীর্ষ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, সম্প্রতি সপ্তাহগুলিতে প্রতিদিনের মৃত্যুর সংখ্যা কমে আসলেও ১ জুন থেকে নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা সিদ্ধান্ত খুব দ্রুতই নেওয়া হয়েছে।
তুর্কি মেডিক্স অ্যাসোসিয়েশনের করোনভাইরাস গবেষণা দল বলছে, করোনার আরেক দফা সংক্রমণ কখন শুরু হবে তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় রয়েছি। করোনার দ্বিতীয় ঢেউটি কখন আঘাত করবে তা নিয়ে আলোচনা চলছে, তবে আমরা এখনও প্রথম দফার সংক্রমণ কাটিয়ে উঠতে পারিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মহাপরিচালক টেড্রোস আধানম গ্যাব্রিয়েসাস বলেছেন, বিশ্বজুড়ে করোনার সংক্রমণ পরিস্থিতি দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। যদিও এই মুহূর্তে ইউরোপের পরিস্থিতি কিছুটা ভালোর দিকে।
তবে মহামারির ছয় মাস পার হলেও এখনই লকডাউনসহ বিধিনিষেধ শিথিলের সময় আসেনি বলেও সতর্ক করেন তিনি।