আজ || বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  মৃত দাদির জন্য খাটিয়া বহনকালে ট্রাকের ধাক্কা, নাতিসহ নিহত ৩       বিএসএফের গুলিতে নিহত জয়ন্তর মরদেহ ফেরত       গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ       পরিকল্পনা বদলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে ৬টি প্লট দেয় রাজউক       পেট্রোবাংলায় তিতাসের কর্মীদের হামলা-ভাঙচুর       সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত       ফকিরহাটে পিকআপ-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪       ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসএফের গুলিতে জয়ন্ত কুমার নামে বাংলাদেশির মৃত্যু       ১১১ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন       কেসিসি’র নাগরিক সেবা কার্যক্রম জোরদার ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষে কাউন্সিলরদের সমন্বয় সভা    
 


বাঙালির এক শোকগাাঁথা অধ্যায়

     বাঙালির এক শোকগাাঁথা অধ্যায়

১৯৭১ সালের ১৫ আগস্ট বাঙালি জাতির জীবনে এক বেদনা বিধুর ও কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই দিনে দেশের ও বিদেশের স্বাধীনতা বিরোধী ষড়যন্ত্রকারীদের মদদে বিশ্বাস ঘাতক, নিমকহারাম কুচক্রী কিছু সেনা কর্মকর্তার বুলেটের আঘাতে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতীক, বাঙালি জাতির পিতা, হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি, বাংলার জ্যোতির্ময় পুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। একই সাথে হত্যা করা হয় তারঁ প্রিয়তমা স্ত্রী বাঙালি স্বাধীকার আন্দোলনের অন্যতম প্রেরণাদাত্রী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা দুই ছেলে শেখ কামাল ও শেখ জামালকে, একান্ত আদরের ছোট ছেলে, স্নেহের ধন কলিজার টুকরা নিষ্পাপ শিশু শেখ রাসেলকে, পুত্রবধু সুলতানা কামাল ও রোজি জামালকে। হত্যা করা হয় বঙ্গবন্ধুর ছোট ভাই বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের কে, এস বি অফিসার সিদ্দিকুর রহমান, কর্নেল জামিল ও সেনা সদস্য সৈয়দ মাহাবুবুল হককে। বংলা মায়ের এসব খাঁটি দেশ প্রেমিক সন্তানদেরকে, কালের সাক্ষী, স্বর্গভূমি ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়ি, বঙ্গবন্ধুর নিজ বাসভবনে বুলেটের আঘাতে নির্মম ও নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। কী দোষ ছিল সেদিন আট বছরের অবুঝ শিশু শেখ রাসেলের? সে তো ছিল পৃথিবীর মাঝে ঈশ্বরের এক ঐশ্বরিক দান। কেন তাকে হত্যা করা হলো? ‘আমাকে মারবে না তো ভাইয়া?’ শিশু মুখ থেকে এমন বাাঁচার আকুতি শোনার পরও বিশ্বাসঘাতক, জানোয়ার, নরপিশাচের দল তাকে বাঁচতে দিল না।
প্রায় একই সময়ে ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবলীগ নেতা শেখ ফজলুল হক মণির বাসায় হামলা চালিয়ে শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বাসায় হামলা করে সেরনিয়াবাত ও তার কন্যা বেবি সেরনিয়াবাত, পুত্র আরিফ সেরনিয়াবাত, নাতি সুকান্ত বাবু, আবদুর রব সেরনিয়াবাতের বড় ভাইয়ের ছেলে শহীদ সেরনিয়াবাত ও এক আত্মীয় আবদুর নঈম খান রিন্টুকে নির্মমভাবে হত্যা করে।
ভাগ্যক্রমে সেদিন বঙ্গবন্ধু কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও তাঁর বোন শেখ রেহানা দেশের বাইরে থাকার কারণে প্রাণে বেঁচে যান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার চরম শত্রু। সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অবমুক্ত করা দলিলের ভাষ্যমতে,-“ ১৫ আগস্ট কতকগুলো খাঁটি দেশপ্রেমিক ও সৎ লোককে হত্যা করা হয়েছে। তাদের প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন থাকতে পারে কিন্তু তাদের দেশপ্রেম ও সততা ছিল প্রশ্নাতীত।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিখাত একজন কুশলী রাজনীতিবিদ হওয়া সত্ত্বেয় বাস্তব জীবনে তিনি অত্যান্ত সহজ সরল ও সাদামনের মানুষ ছিলেন। তিনি অত্যান্ত সাদামাটাভাবে জীবন যাপন করতেন। বাংলার মানুষের প্রতি তাঁর এমন অঘাত বিশ্বাস ছিল যে নিজের নিরাপত্তার কথা কখনো তিনি ভাবতেন না। নিরাপত্তার জন্য শক্তিশালী কোনো বলয়ও ছিল না। তাইতো তিনি দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়া সত্ত্বেয়, অনেক সেনা কর্মকর্তার অনুরোধ সত্ত্বেয় বঙ্গভবন বা গণভবনে না থেকে থাকতেন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের ছোট্ট বাড়িতে, নিজ বাসভবনে। তিনি কখনো বিশ্বাস করতে পারেননি বাংলার মানুষ তাকে কখনো মারতে পারে। একদিন রক্ষিবাহিনীর দুই সেকেন্ডম্যান সরোফার মোল্লা ও আনোয়ারুল আলম শহীদকে নিয়ে তারা বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠার কথা বলতে বঙ্গবন্ধুর কাছে যান। নিরাপত্তার বিষয় নিয়ে কথা বলেন এবং পরামর্শ দিলেন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ি ছেড়ে বঙ্গভবন বা গণভবনে উঠতে। কিন্তু এতে তিনি সায় দিলেন না। বঙ্গবন্ধু তাদের বললেন, “মানুষ সারা জীবন আমাকে তাদের মাঝে পেয়েছে। ধানমন্ডি ছাড়লে তাদের থেকে দূরে সরে যাবে। আমি মানুষের নেতা, মানুষের মাঝে থাকতে চাই।”

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়ার বই হতে পাই, ‘খুনি ডালিমের স্ত্রী নিম্মি ছিলেন শেখ রেহানার সহপাঠী। নিম্মি নিয়মিত ধানমন্ডি ৩২ নম্বর বাড়িতে আসতেন। বাদ থাকতো না ডালিমের শাশুড়িও। তারা দুপুরে খেতেন। আসতেন ডালিমও। একদিন ডালিম বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবকে বললেন, তার মা নেই। বেগম মুজিবকে দেখলে মায়ের মুখটা মনে পড়ে। অনুমতি নিয়ে ডালিম বেগম মুজিবকে মা ডাকলেন। বেগম মুজিব তাকে পুত্র স্নেহের খাবার তুলে দিতেন। নিয়তির নিষ্ঠুর পরিহাস সেই ডালিম ছিলেন ১৫ আগস্টের খুনিদের অন্যতম। খুনি ডালিমের কি একবারের জন্যও মনে পড়েনি বেগম মুজিবের স্নেহের কথা? মানুষ এতটা ভয়ংকর হয় কি করে! আবার ১৫ আগস্টের খুনিদের সরদার খন্দকার মোশতাকের অনুরোধে তার নির্বাচনী এলাকা সফর করে তাকে বিজয়ী করে আনেন বঙ্গবন্ধু। বিশ্বাসঘাতক, নিমকহারাম খন্দকার মোশতাক ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সেই অবদানের কথা মনে রাখেননি।’

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে নিজ বাসভবন ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। যে খোকার জন্মগ্রহণের কথা গ্রামের মানুষ ছাড়া কেউ জানেনি অথচ জন্মের প্রায় পঞ্চান্ন বছর পর সেই খোকার যখন ঘাতকদের হাতে নির্মম মৃত্যু হয়েছে, তখন সারা বিশ্ববাসী তাঁর মৃত্যু শোকে আচ্ছন্ন হয়ে পড়েছিল। স্তম্বিত হয়ে পড়েছিল সারা বিশ্বসম্প্রদায়। কারণ তিনি তো তখন শুধু টুঙ্গিপাড়ার খোকা নন, সারা বিশে্বর কাছে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নামে আখ্যায়িত।
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর সংবাদ শুনে ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বলেন, শেখ মুজিব নিহত হওয়ার খবরে আমি মর্মাহত। তিনি একজন মহান নেতা ছিলেন। তাঁর অনন্য সাধারণ সাহসিকতা এশিয়া ও আফ্রিকার জনগণের জন্য প্রেরণাদায়ক ছিল।
কিউবার সাবেক প্রেসিডেন্ট এবং কিংবদন্তি বিপ্লবী ফিদেল ক্যাস্ত্রো বলেছিলেন, ‘ আমি হিমালয় দেখিনি, কিন্তু শেখ মুজিবকে দেখেছি। ব্যক্তিত্ব ও সাহসিকতায় তিনি হিমালয়ের মত।’
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বলেন, ‘সহিংস ও কাপুরুষোচিতভাবে বাংলাদেশের জনগণের মাঝ থেকে এমন প্রতিভাবান ও সাহসী নেতৃত্বকে সরিয়ে দেওয়া কী যে মর্মান্তিক ঘটনা! তারপরও বাংলাদেশ এখন বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে যাচ্ছে, তাঁরই কন্যার নেতৃত্বে। যুক্তরাষ্ট্র তাঁর সেই স্বপ্ন পূরণে বন্ধু ও সমর্থক হতে পেরে গর্ববোধ করে।’
বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে ব্রিটেনের তৎকাণীন প্রধানমন্ত্রী হ্যারল্ড উইলসন এক চিঠিতে বলেছেন,ÔIt is a great national tragedy for you, but a personal tragedy for me..’(এটা তোমাদের জন্য এক বিরাট জাতীয় ট্রাজেডী; কিন্তু আমার কাছে একটি ব্যক্তিগত ট্রাজেডি)। আধুনিক মালয়েশিয়ার জনক ও মুসলিম বিশে^র প্রভাবশালী নেতা মাহাথির মোহাম্মদ বলেছিলেন,‘আন্তর্জাতিক পরিম-লও বাংলাদেশকে চিনতো বঙ্গবন্ধুর নামে। বাঙালি জাতির মুক্তিদাতা বঙ্গবন্ধুকে খুনের ঘটনায় বিশ^বাসী এই জাতি সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে পড়ে।’ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে ফিলিস্তিনের সাবেক প্রেসিডেন্ট ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘আপসহীন সংগ্রামী নেতৃত্ব আর কুসুম কোমল হৃদয় ছিল মুজিব চরিত্রের বৈশিষ্ট্য।’

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর খবর শুনে ইরাকের প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেন সেদিন শোক দিবস পালন করেন। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হচ্ছেন সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে প্রথম শহিদ। তাই তিনি অমর।’ এমনকি ইরাকে অবস্থানরত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত কে জি মোস্তফাকে সেদিনই ইরাক থেকে বের করে দেন। পরবর্তীতে কে জি মোস্তফা সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেছেন, ‘সকালে(১৫ আগস্ট) সাদ্দাম হোসেন তাঁর বিশেষ ফোর্স দিয়ে আমাকে তাঁর প্রাসাদে তুলে নিয়ে যান, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার জন্য আমার কাছে কৈফিয়ত চান। ক্ষুব্ধ আচরণ করেন। বাকিতে দেওয়া ইরাকি তেলের সব টাকা সাত দিনের মধ্যে পরিশোধের হুকুম দেন। এরপর আমাকে তাঁর দেশ থেকে বহিষ্কার করেন। সিরিয়াগামী একটি ফ্লাইটে জোর করে তুলে দেওয়া হয় আমাকে।’

বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুর পর তখনকার মার্কিন রাজনীতিতে প্রভাবশালী এক সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডি এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘১৯৭১ সালে শেখ মুজিবুর রহমানের নামেই বিশ^বাসী তোমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং তাঁর নামেই বাঙালিকে স্বাধীন জাতির মর্যদা দিয়েছে। আমি শুধু বলব, পৃথিবীতে দু-শ্রেণির প্রাণী আছে। মনুষ্য প্রাণী ও অমনুষ্য প্রাণী। তোমাদের বাঙালি জাতির ভাগ্য পাল্টাবে কে, যদি তোমাদের মনুষ্য জাতির মধ্যে অমনুষ্য প্রাণীর আধিপত্য প্রবল হয়ে ওঠে। যারা বিশ্ব নন্দিত মহামানবসম শেখ মুজিববে হত্যা করতে পারে তারা নরকের কীট।’ বঙ্গবন্ধুর মৃত্যুতে কেঁপে ওঠে রাজনৈতিক গণমাধ্যমগুলো। তাঁর মৃত্যুতে ‘দ্য ফিন্যান্সিয়াল টাইমস’ লিখেছে,‘মুজিব না থাকলে বাংলাদেশ কখনোই জন্ম নিত না।’ লন্ডনের ‘সানডে অবজারভার’ পত্রিকায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে ‘পোয়েট অব পলিটিক্স(রাজনীতির কবি) হিসেবে আখ্যায়িত করে লিখেছে, ‘এই কবির কণ্ঠে মধ্যযুগীয় একটি ধর্মীয় রাষ্ট্রের কাঠামো ভেঙে বেরিয়ে এসেছিল স্বাধীন, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। যার চারটি রাষ্ট্রীয় ভিত্তি- গণতন্ত্র, জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্ম নিরপক্ষতা।’ লন্ডনের ‘দ্য টাইমস অব লন্ডন’ পত্রিকায় ১৯৭৫ সালের ১৬ আগস্ট সংখ্যায় বলা হয়, ‘সব কিছু সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুকে সব সময় স্মরণ করা হবে। কারণ তাকে ছাড়া বাংলাদেশের বাস্তব কোনো অস্তিত্ব নেই।’

বাংলাদেশ এবং পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের কবি, সাহিত্যিকগণ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে যত গান, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ লিখেছেন পৃথিবীর অন্য কোনো রাষ্ট্রনায়ককে নিয়ে এর কিয়দংশও লেখেননি। শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বরে সহস্র কবি সাহিত্যিক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হৃদয়ে ধারণ করেছিলেন। তাইতো তাঁরা শত সহস্র লেখনির মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুকে ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। এখানে তাঁর কিয়দংশ তুলে ধরা হলোঃ

বাংলা আধুনিক ও চলচ্চিত্র সংগীতের বিশিষ্ট গীতিকার ও সুরকার গৌরী প্রসন্ন মজুমদারের লেখা ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিসেনাদের অনুপ্রেরণার উৎস ছিল যে গানটি। গানটি হলো-

শোন একটি মুজিববের থেকে
লক্ষ মুজিবরের কণ্ঠস্বরের ধ্বনি-প্রতিধ্বনি
আকাশে বাতাসে ওঠে রণি
বাংলাদেশ, আমার বাংলাদেশ।।

সেই সবুজের বুক চেরা মেঠোপথে
আবার যে যাব ফিরে, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
শিল্পে-কাব্যে কোথায় আছে
হায়রে এমন সোনার ক্ষনি।।

বিশ্বকবির ‘সোনার বাংলা’
নজরুলের ‘বাংলাদেশ’
জীবনানন্দের ‘রূপসী বাংলা’
রূপের যে তার নেইকো শেষ, বাংলাদেশ।

‘জয় বাংলা’ বলতে মনরে আমার
এখনো কেন ভাব, আমার
হারানো বাংলাকে আবার তো ফিরে পাব
অন্ধকারে পূব আকাশে
উঠবে আবার দিনমণি।

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে হাসান মতিউর রহমানের রচনায় শিল্পী মলয় কুমার গাঙ্গুলীর বিখ্যাত গান-
যদি রাত পোহালে শোনা যেত,
বঙ্গবন্ধু মরে নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো,
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা,
আমরা পেতাম ফিরে জাতির পিতা।

যে মানুষ ভীরু কাপুরুষের মতো,
করেনি কো কখনো মাথা নত।
এনেছিল হায়েনার ছোবল থেকে
আমাদের প্রিয় স্বাধীনতা।

কে আছে বাঙালি তাঁর সমতুল্য,
ইতিহাস একদিন দেবে তার মূল্য।
সত্যকে মিথ্যার আড়াল করে,
যায় কি রাখা কখনো তা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মিশে আছে বাংলার প্রকৃতির সাথে। নদীমাতৃক এই বাংলাদেশে তাঁর কীর্তির কারণে তাঁর নাম, যশ, খ্যাতি বহমান থাকবে প্রবাহিত নদীর মতই। তাইতো স্বনামধন্য বাঙালি কবি অন্নদাশঙ্কর রায়ের কবিতার পঙতিতে পাই-
যতকাল রবে পদ্মা, মেঘনা
গেীরী, যমুনা বহমান
ততকাল রবে কীর্তি তোমার
শেখ মুজিবুর রহমান।
দিকে দিকে আজ অশ্রুগঙ্গা
রক্তগঙ্গা বহমান
নাই নাই ভয় হবে হবে জয়
জয় মুজিবুর রহমান।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণ লিখেছেন তিনটি বিখ্যাত কবিতা। ১। আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি ২। স্বাধীনতা- এই শব্দটি কীভাবে আমাদের আমাদের হলো ৩। সেই রাত্রির কল্পকাহিনী

আমি যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি

সমবেত সকলের মতো আমিও
গোলাপ ফুল খুব ভালোবাসি,
রেসকোর্স পার হয়ে যেতে
এইসব গোলাপের একটি গোলাপ
গতকাল আমাকে বলেছে, আমি
যেন কবিতায় শেখ মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি।

শহিদ মিনার থেকে খসে-পড়া
একটি রক্তাক্ত ইট গতকাল আমাকে বলেছে,
আমি যেন কবিতায় শেক মুজিবের কথা বলি।
আমি তাঁর কথা বলতে এসেছি। —
আমি আজ কারো রক্ত চাইতে আসিনি,
আমি আমার ভালোবাসার কথা বলতে এসেছিলাম।

একবার ভাবুন একজন কবি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কতটুকু ভালবাসলে এমন কবিতা লিখতে পারে। কলমের কালি দিয়ে নয়, কবি তার হৃদয়ের কালি দিয়েই এসব কবিতা লিখেছেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার পর তাঁর লাশ বত্রিশ নম্বর বাড়ির সিঁড়িতে পড়েছিল। সেই সিঁড়ি বেয়ে বঙ্গবন্ধুর পবিত্র রক্ত ভিজিয়েছে সারা বাংলার মাটিকে। সেই রক্তে রঞ্জিত হয়েছে স্বদেশের মানচিত্র। তাইতো কবি রফিক আজাদ লিখেছেন-
এই সিঁড়ি নেমে গেছে বঙ্গোপসাগরে,
সিঁড়ি ভেঙে রক্ত নেমে গেছে-
বত্রিশ নম্বর থেকে
সবুজ শস্যের মাঠ বেয়ে
অমল রক্তের ধারা ব‘য়ে গেছে বঙ্গোপসাগরে।—–
স্বদেশের মানচিত্র জুড়ে পড়ে আছে
বিশাল শরীর—–
মৃত্যুর মধ্য দিয়েই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পৃথিবীতে অমর হয়ে আছেন। হত্যার মাধ্যমে মুজিবকে মুছে ফেলার ঘাতকদের নীলনকশা ব্যর্থতায় পর্যবসিত করে মুজিব ঠাঁই নিলেন বাঙালির হৃদয় মহলে। আর মৃত্যুর পথ ধরেই তিনি হলেন মৃত্যুঞ্জয়ী।
হাজারো কবির মাঝে আমিও একজন ক্ষুদ্র কবি। তাদের মতো আমার একটি মন আছে, ভালোবাসা আছে, আছে আবেগ ও অনুভুতি অনেকটা তাদের মত। হয়তো আমি তেমন লিখতে পারি না। তবু কাঁদতে তো পারি। আমি তাঁর ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’ পড়েছি। যে পাতার প্রতিটি শব্দে শিহরণ জাগে। এই মা, মাটি ও মানুষের জন্য তার ত্যাগের মহিমায় ডুবে যেয়ে কোথাও কোথাও নয়ন ভেঙে অশ্রু এবং বুক ফেটে ক্রন্দন বেরিয়ে এসেছে। চিৎকার নয়, নিভৃতে কেঁদেছি। আর তা থেকেই আমার নিম্নরে এই ক্ষুদ্র লেখনির প্রয়াস।

বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি

বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি পিতার মুখে,
অসমাপ্ত জীবনী থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি রেসকোর্স ময়দানের
অগ্নিঝরা ভাষণ থেকে।।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি ত্রিশ লক্ষ বীর শহিদের
আত্মত্যাগের কাব্য থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি বাংলা মায়ের দামাল ছেলের
উন্মাদনার কণ্ঠ থেকে।।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, গৌরীর
স্নেহময়ী সেই কলতান থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি ৪৮ থেকে ৭১ এর
লক্ষ জনতার মিছিল থেকে।।

বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি ‘কারাগারের রোজনামচা’
‘আমার দেখা নয়াচীন’ থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি সারা বিশ্বের বিশ্বসেরা
সহস্র লেখকের লেখনী থেকে।।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি স্তব্দতার প্রতীক, কালের সাক্ষী
‘৩২ নম্বর বাড়ি’ থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি মহাকালের মহান সাক্ষী
রাজপথের বট বৃক্ষ থেকে।।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি গোপালগঞ্জের জনগণ
আর টুঙ্গীপাড়ার মাটি থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি টেকনাফ থেকে তেতুলিয়া
মুক্তিযোদ্ধার ঘাটি থেকে।।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি মুক্তিবাহিনীর সহস্র মাতার
লেখা সহস্র পত্র থেকে।
বঙ্গবন্ধুকে জেনেছি দেশের চির শত্রুকে
ক্ষমার বিরল দৃষ্টান্ত থেকে।।
জেনেছি আমি- মহান নেতা, জাতির পিতা
শেখ মুজিবুর রহমান ।
যার ছবিতে, ভাষণে, ভাস্কর্যে
জুড়ায় আমার প্রাণ।।

অসীম কুমার সরকার
সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার
তালা, সাতক্ষীরা


Top