আজ || বুধবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪
শিরোনাম :
  মৃত দাদির জন্য খাটিয়া বহনকালে ট্রাকের ধাক্কা, নাতিসহ নিহত ৩       বিএসএফের গুলিতে নিহত জয়ন্তর মরদেহ ফেরত       গুলিতে নিহত বাংলাদেশি যুবকের মরদেহ ফেরত দিলো বিএসএফ       পরিকল্পনা বদলে শেখ হাসিনা ও তার পরিবারকে ৬টি প্লট দেয় রাজউক       পেট্রোবাংলায় তিতাসের কর্মীদের হামলা-ভাঙচুর       সরকারি বঙ্গবন্ধু কলেজে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে আলোচনা সভা ও দোয়া অনুষ্ঠিত       ফকিরহাটে পিকআপ-ইজিবাইকের মুখোমুখি সংঘর্ষে নিহত ৪       ঠাকুরগাঁওয়ে বিএসএফের গুলিতে জয়ন্ত কুমার নামে বাংলাদেশির মৃত্যু       ১১১ বারের মতো পেছালো সাগর-রুনি হত্যা মামলার প্রতিবেদন       কেসিসি’র নাগরিক সেবা কার্যক্রম জোরদার ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার লক্ষে কাউন্সিলরদের সমন্বয় সভা    
 


পুলিশ হেফাজতে নারীর মৃত্যু, ফ্যানের সঙ্গে চুল বেঁধে নির্যাতনের অভিযোগ

যশোরের অভয়নগরে পুলিশ হেফাজতে আফরোজা বেগম (৪০) নামের এক নারীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। রোববার দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে অভয়নগর থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে আনার পথে তার মৃত্যু হয়। এর আগে শনিবার রাত দেড়টার দিকে উপজেলার নওয়াপাড়া গ্রাম থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানা হাজতে রাখা হয়।

স্বজনদের দাবি, ইয়াবা দিয়ে ফাঁসিয়ে গ্রেফতারের পর নির্মম নির্যাতনে তার মৃত্যু হয়েছে। তবে পুলিশ বলছে, ইয়াবাসহ আটক ওই নারী হৃদরোগে অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। পুলিশ চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। মারা যাওয়া আফরোজা বেগম (৪০) নওয়াপাড়া মহাশ্মশান নর্থবেঙ্গল রোডের বাসিন্দা আবদুল জলিল মোল­ার স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, শনিবার রাত দেড়টার দিকে অভিযান চালিয়ে নওয়াপাড়া গ্রামের বাড়ি থেকে আফরোজাকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছে ৩০টি ইয়াবা পাওয়া যায়। অভয়নগর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) সিলন আলী, শামসুল হক ও নারী কনস্টেবল রাবেয়া খানম অভিযানে ছিলেন। গ্রেফতারের পর তাকে থানা হাজতে রাখা হয়। এ ঘটনায় রবিবার সকালে আফরোজার বিরুদ্ধে অভয়নগর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ৩৬(১)১০(ক) ধারায় মামলা করা হয়েছে।

সকাল ৮টা ২০ মিনিটে আফরোজা থানায় অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাকে চিকিৎসার জন্য অভয়নগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা কয়েকটি টেস্ট দিলেও পুলিশ সদস্যরা সেগুলো করতে না দিয়ে ফের থানায় নিয়ে আসে। সকাল পৌনে ১০টার দিকে আবার অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে আবারও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সেখানকার চিকিৎসকরা উন্নত চিকিৎসার জন্য যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিতে বলেন। দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে হাসপাতালে নেওয়ার পর তাকে মৃত ঘোষণা করেন জরুরি বিভাগের চিকিৎসকরা।

যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা হাসিব মোঃ আলী হাসান বলেন, ‘১১টা ৩৫ মিনিটে আফরোজাকে হাসপাতালে আনা হয়। এখানে আনার আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। অভয়নগর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে, তাতে বলা হয়েছিল রক্তচাপ ছিল। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে মৃত্যু হয়েছে, তা ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর বলা যাবে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আফরোজার বড় ছেলে ইজিবাইক চালক মুন্না মোল­া বলেন, ‘স্থানীয় একটি মহলের ইন্ধনে অভয়নগর থানার এএসআই সিলন আলী, শামসুল হক ও কনস্টেবল রাবেয়া খানম শনিবার মধ্যরাতে আমাদের বাড়িতে আসেন। এরপর নিজেদের কাছে থাকা ইয়াবা দিয়ে মাকে গ্রেফতার দেখান। এ সময় ওই দুই পুলিশ কর্মকর্তাসহ আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য মায়ের চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে মারধর করে। রাত আড়াইটার দিকে থানায় নিয়ে যায়। সকালে থানায় গিয়ে দেখতে পাই মা খুব অসুস্থ। পুলিশকে বারবার অনুরোধ করলে তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। চিকিৎসকরা কয়েকটি টেস্ট দিলেও পুলিশ সেগুলো করতে না দিয়ে আবার থানায় নিয়ে যান। এরপর আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। নিয়ে আসার পথেই মায়ের মৃত্যু হয়।’

মুন্নার অভিযোগ, ‘পুলিশ আমাদের ঘরে থাকা ইজিবাইক বিক্রির এক লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে গেছে। আরও দুই লাখ টাকা ঘুষের দাবিতে নির্যাতন করে মাকে হত্যা করেছে। আমি এ ঘটনার বিচার চাই।’

আফরোজার ছোট ছেলে নওয়াপাড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্র সাব্বির মোল­ার ভাষ্য, ‘রাতে আম্মু বাড়ির পাশে পানি আনতে যান। এ সময় বাড়িতে পাঁচজন পুলিশ আসেন। এর মধ্যে সিলন দারোগা (এএসআই সিলন আলী) আম্মুকে তার কাছে যা আছে, বের করে দিতে বলেন। তার কাছে কিছু নেই জানালে তিনি (সিলন আলী) একজন নারী পুলিশকে ফোন করে ডেকে আনেন। তিনি আম্মুর শরীর তল­াশি করেও কিছু পাননি। এরপর সিলন দারোগা আম্মুকে চড় দিতে দিতে মাটিতে ফেলে দেন। আম্মুকে মারতে নিষেধ করলে সিলন দারোগা আমাকেও দু’টি চড় মারেন। গালিগালাজও করেন। এরপর আমার চোখের সামনে মায়ের চুল ফ্যানের সঙ্গে বেঁধে ঝুলিয়ে রেখে মারধর করে পুলিশ।’

আফরোজাকে নির্যাতন করার অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে এএসআই সিলন আলী বলেন, ‘আফরোজাকে মারধর কিংবা ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে নির্যাতনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তার পরিবারের সদস্যরা নির্যাতনের মিথ্যা অভিযোগ করেছেন।’

এ ব্যাপারে জানতে চাইলে অভয়নগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম আকিকুল ইসলাম বলেন, ‘৩০টি ইয়াবাসহ আফরোজাকে রাত দেড়টার দিকে গ্রেফতার করা হয়। রাতে থানা হাজতে রাখা হয়। সকালে অসুস্থ হয়ে পড়লে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। অবস্থার অবনতি হলে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়ার পর মৃত্যু হয়। চিকিৎসক বলেছেন তার উচ্চ রক্তচাপ ছিল। থানায় অস্বাভাবিক কোনও কিছু ঘটেনি। ময়নাতদন্তের জন্য লাশ মর্গে আছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর কারণ জানা যাবে।’

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে অভয়নগর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জাহিদুল ইসলাম বলেন, শনিবার রাত দেড়টার দিকে মাদকসহ ওই নারীকে আটক করা হয়। তাকে কোনো ধরনের নির্যাতন করা হয়নি। সকালে তিনি অসুস্থ বোধ করলে স্বজনদের উপস্থিতিতেই তাকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। তার উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ থাকায় পরে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হয়। কিন্তু পথে তিনি মারা যান। পুলিশ তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। যদি নির্যাতনের ঘটনা ঘটে থাকে, তাহলে তদন্ত করে দেখা হবে।
তিনি আরও বলেন, স্বজন হারিয়ে ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে অনেক কথাই বলতে পারে। প্রকৃতপক্ষে পুলিশের কোনো সদস্য ওই নারীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারও করেনি।

সূত্র : বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা পোষ্ট অনলাইন।


Top