খুলনার পাইকগাছার কালীনগর গ্রামের কৃষক সুব্রত মন্ডলের কাঁচা বসতঘর, রান্নাঘর এবং টয়লেটও ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, শুধু বাড়ির উঠান নয়, ঘরের মধ্যেও পানি। সে কারণে বাধ্য হয়ে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আশ্রয় নিয়েছি বাড়ির পাশের স্কুল ভবনে। কিন্তু রান্না করা যাচ্ছে না। সেজন্য ত্রাণের যে শুকনো খাবার পাচ্ছি, তাই খেয়েই দিন পার করতে হচ্ছে।
একই গ্রামের চঞ্চলা মন্ডলদের দুটি বসতঘর ও রান্নাঘর ধসে পড়েছে। তিনি বলেন, পরিবারের সদস্যদের নিয়ে দারণমল্লিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনে আশ্রয় নিয়েছি। এই ৫ দিন ধরে চিড়া-মুড়ি খেয়েই থাকতে হচ্ছে। আশপাশের অনেক ঘরই ধসে গেছে।
শুধু এই দুইজনই নয়; পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি খুলনার পাইকগাছা উপজেলার ১৩টি গ্রামের অধিকাংশ মানুষের কাঁচা ঘরবাড়ি ধসে পড়েছে। গৃহহীন লোকজন কেউ স্কুল ভবনে, কেউ উঁচু রাস্তার উপর বসবাস করছেন। রাস্তায় থাকা লোকজন ভারী বৃষ্টির কারণে পড়েছেন চরম বিপাকে। স্থানীয় লোকজন ও পানি উন্নয়ন বোর্ড ৫ দিন ধরে চেষ্টা করেও ভেঙে যাওয়া বেড়িবাঁধ মেরামত সম্পন্ন করতে পারেননি।
ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকটি গ্রাম ঘুরে দেখেছেন জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা আব্দুল করিম। তিনি জানান, ১৩টি গ্রামের ৩ হাজার ২০০ পরিবারের প্রায় ১২ হাজার মানুষ পানিবন্দি রয়েছে। সব পরিবারই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহেরা নাজনিন জানান, পাঁচদিন ধরে পানিবন্দি থাকায় ১৩টি গ্রামের সব কাঁচা ঘরবাড়িই ধসে পড়েছে। তবে পানি না নামা পর্যন্ত এই সংখ্যা নিরূপণ করা সম্ভব হচ্ছে না।
দেলুটি ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল জানান, কালীনগর, দারুল মল্লিক, হরিণখোলা, সৈয়দখালি, সেনেরবেড়, গোপীপাগলা, খেজুরতলা, তেলিখালী, হাটবাড়ী, ফুলবাড়ী, বিগরদানা, দুর্গাপুর ও নোয়াই গ্রাম প্লাবিত রয়েছে। এলাকার বহু মানুষ গৃহহীন হয়ে পড়েছে। এলাকায় খাবার, বিশুদ্ধ পানির সংকটের পাশাপাশি টয়লেটগুলোও প্লাবিত হওয়ায় লোকজন চরম বিপাকে পড়েছেন। তবে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণসহায়তা অব্যাহত রয়েছে।
দেলুটি ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য পলাশ রায় জানান, এই এলাকার বেশিরভাগ লোক দরিদ্র। বেড়িবাঁধ ভেঙে এবার তারা নিঃস্ব হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অসীম কুমার দাশ জানান, ৯৫০ হেক্টর আমন ধানক্ষেত, ২২৫ হেক্টর আমন ধানের বীজতলা ও ২৫ হেক্টর জমির সবজি ক্ষেত তলিয়ে গেছে।
সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সৈকত মল্লিক জানান, প্রায় ৪০০টির মতো চিংড়ি ঘের ও পুকুর তলিয়ে গেছে। এতে প্রায় ৮ কোটি ২৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এদিকে সোমবার ভোর থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় হাজারও মানুষ বেড়িবাঁধ মেরামতের কাজ করছেন। তবে এখনও সব কাজ শেষ হয়নি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড-২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আশরাফুল আলম বলেন, দুটি এস্কাভেটর দিয়ে মাটি কেটে এবং জিও টিউব দিয়ে রিং বাঁধের কাজ করা হচ্ছে। শত শত মানুষ কাজ করছেন। তবে বৃষ্টির কারণে কাজ কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
তিনি বলেন, ভারী বৃষ্টি এবং পূর্ণিমার গোনের কারণে নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে পানি বেড়েছে ৩ ফুট। সে কারণে বারবার চেষ্টা করেও বেড়িবাঁধ মেরামত বিলম্বিত হচ্ছে।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুরে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) ২২ নম্বর পোল্ডারের কালীনগর গ্রামের রেখামারী খালের গোড়ার দিকের এলাকায় ভদ্রা নদীর তীরের প্রায় ২০০ ফুট বেড়িবাঁধ ভেঙে যায়। তবে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাঁধের ভাঙা অংশ বড় হয়ে গেছে।