চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলামের (৫৯) করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ছিলেন না। কিন্তু হঠাৎ করেই শ্বাস কষ্ট নিয়ে মৃত্যুবরণ করেন বৃহস্পতিবার (১১ জুন) রাতে। করোনার উপসর্গ থাকায় বিপত্তি বাধে এই প্রবীণ শিক্ষকের লাশ দাফনে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে এই শিক্ষকের নিজ গ্রাম রাউজানের নোয়াপাড়া এলাকায় কবর দিতে নিয়ে গেলে বাধা দেন এলাকাবাসী।
অমানবিক এই ঘটনার পর রাঙ্গুনিয়া থানার এসআই ইসমাইল হোসেন জুয়েলের মানবিক হস্তক্ষেপে এবং গাউছিয়া কমিটির সহায়তায় রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পাগলা মামার মাজার কবরস্থানে এই কলেজ শিক্ষককে দাফন করা হয় শুক্রবার (১২ জুন) ভোর রাতে। রাঙ্গুনিয়া থানা পুলিশের মানবিক হস্তক্ষেপে এই কলেজ শিক্ষক কবরের মাটি পেয়েছেন।
রাঙ্গুনিয়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইসমাইল হোসেন জুয়েল জানান, বৃহস্পতিবার রাত ৮টার দিকে রাঙ্গুনিয়ার সৈয়দা সেলিমা কাদের চৌধুরী ডিগ্রি কলেজের জীববিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম শ্বাসকষ্ট নিয়ে মারা যান। এর আগে সন্ধ্যায় হঠাৎ তার শ্বাসকষ্ট শুরু হলে দ্রুত তাকে রাঙ্গুনিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত ৯টার দিকে সেখানে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। এরপর স্বজনরা লাশ দাফন কাফনের জন্য মৃতের নিজ গ্রাম রাউজান উপজেলার নোয়াপাড়া গ্রামে নিয়ে গেলে স্থানীয়রা তার লাশ দাফনে বাধা প্রদান করেন। ফিরিয়ে দেয়া হয় লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্স। স্বজনরা লাশ দাফন করতে না পেরে লাশ নিয়ে ফিরে আসেন এই শিক্ষকের কর্মস্থল রাঙ্গুনিয়া উপজেলায়। কোন উপায় না পেয়ে তারা রাস্তার পাশেই কাঁধছিলেন। বাবার লাশ নিয়ে কোথায় যাবেন সন্তান!
এসআই ইসমাইল হোসেন জুয়েল বলেন, ওই প্রয়াত শিক্ষকের ছেলে কোনভাবে ফেসবুকে আমার সঙ্গে সংযুক্ত ছিলেন। সেই সুবাধে রাত ১টার দিকে প্রয়াত কলেজ শিক্ষকের লাশ দাফন করতে না পারার বিষয়টি আমাকে জানান। এমন অমানবিক ঘটনা জানতে পেরে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে জানিয়ে আমি দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যাই। সঙ্গে আরো কয়েকজন সহকর্মী ছিলেন।
এসআই ইসমাইল জানান, ঘটনাটি জানতে পেরে রাঙ্গুনিয়ায় স্থানীয়ভাবে লাশ দাফনে সহায়তাকারী গাউছিয়া কমিটির নেতৃবৃন্দকে জানানো হলে গভীর রাতে তারাও এই শিক্ষকের লাশ দাফনে এগিয়ে আসে। এর পর গভীর রাত সাড়ে ৩টায় রাঙ্গুনিয়ার পাগলা মামার মাজার সংলগ্ন কবরস্থানে কলেজ আনোয়ারুল ইসলামের লাশ দাফন করা হয়।
এসআই আরও জানান, রাঙ্গুনিয়ায় উপজেলার কলেজে শিক্ষকতার কারণে এই শিক্ষক রাঙ্গুনিয়ায় একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন। কিন্তু তার স্থায়ী ঠিকানা পাশ্ববর্তী উপজেলা রাউজানে। মৃত্যুর পর তার স্থায়ী ঠিকানাতে কবরের জায়গা হয়নি। রাঙ্গুনিয়া পুলিশের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি একজন মানুষের কবর দেয়ায় সহায়তা করতে পেরেছি। গভীর রাতে একটি অসহায় পরিবারের পাশে থাকতে পেরেছি। এভাবে মানবিক পুলিশ হয়ে মানুষের সেবা করতে চাই।