বলিউডের তরুণ অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত আত্মহত্যা করেছেন। হতাশার কারণে তিনি এই চূড়ান্ত পদক্ষেপ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে। একজন তারকা আত্মহত্যা করেছেন বলেই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। তবে এমন ঘটনা আমাদের চারপাশে প্রায়ই ঘটে। যার খোঁজ খুব বেশি মানুষ রাখে না। মানুষকে হতাশার হাত থেকে বাঁচাতে এবং আত্মহত্যার মতো চূড়ান্ত পদক্ষেপ থেকে ফিরিয়ে আনতে কথা বলতে হবে এবং সচেতনতামূলক কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
১৫ থেকে ২৯ বছর বয়সীদের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মৃত্যু হয় আত্মহত্যার কারণে। প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বে একজন ব্যক্তি আত্মহত্যা করেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে প্রতিবছর বিশ্বে ৮ লাখ মানুষ আত্মহত্যা করেন। এছাড়া বহু মানুষ আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। আত্মহত্যা প্রতিরোধে সমাজ হিসেবে আমাদের কতটা কাজ করা দরকার তার বেদনায়ক উদাহরণ এটি। সমাজে এই বিষয়ে কথা বলা এবং সচেতনতামূলক কর্মকাণ্ড নেয়া উচিত।
আমাদের সমাজে সাধারণত যারা বিভিন্ন মনোরোগে ভোগেন এবং মনোরোগ বিশেষজ্ঞের কাছে যান তাদেরকে অনেকে পাগল ভাবতে শুরু করেন। যার কারণে এই বিষয়টি এখনো সমাজে অনেকটা নিষিদ্ধ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। যারা মানসিক অসুস্থতা নিয়ে বেঁচে রয়েছেন তাদের অবস্থা দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এই দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবর্তন আনতে হবে। ‘লোকে কী বলবে’ এটা না ভেবে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দিতে হবে।
আত্মহত্যাকারীকে দোষারোপ করার হৃদয়বিদারক ধারা
আমাদের সমাজে আত্মহত্যাকারীদের বা আত্মহত্যা চেষ্টাকারীদের দোষারোপ করা একটি রীতিতে পরিণত হয়েছে। কেউ আত্মহত্যা করলে ‘তিনি কেন তার বাবা-মা বা পরিবারের সদস্যদের কথা ভাবেননি?, পরিবারের সদস্যরা তার পাশে দাঁড়াননি? এমন নানাধরণের প্রশ্ন তোলা হয়। এমনকি এর দায়ভার পুরো পরিবারের ওপরও চাপিয়ে দেয়া হয়।
আসলে কেউ হতাশায় ভুগলে বা মানসিক স্বাস্থ্য খারাপ হলে আমরা কী করতে পারি? প্রথম পদক্ষেপটি হলো আমরা তার ব্যথা অনুভব করতে পারি, এই বিষয়ে সে কষ্ট পায় এমন কিছু বলা থেকে বিরত থাকতে পারি এবং তার সঙ্গে খোলামেলা আলোচনা করতে পারি। অন্তত তার পাশে দাঁড়াতে পারি।
দয়া বিনামূল্যে হলেও এটি খুব কমই পাওয়া যায়
আমরা ছোটবেলা থেকেই গল্প ও কল্পকাহিনী শুনে বড় হয়েছি যেগুলোতে অনুপ্রেরণামূলক এবং নৈতিক জীবনের পাঠ ছিল। এই গল্পগুলো তরুণ মনের জন্য ছিল যাতে করে আমরা উন্নততর মানুষ হতে পারি। তবে বড় হয়ে বা এই সমাজের বেশিরভাগ মানুষই ভুলে গেছে দয়া হলো একটি বিনামূল্যের ও মানবতার মূল উপাদান।
আমাদের মনে রাখা দরকার যে দয়া কারও জীবন বাঁচাতে পারে। দয়া সেই ভাষা যেখানে আশা জাগানো হয়। যারা মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থার
সঙ্গে লড়াই করেন তারা এত সহজে মৃত্যুবরণ করতে চান না। তারা তাদের ব্যথা শেষ করতে চায়। তারা আবার আনন্দ পেতে চায়, সুখের অভিজ্ঞতা অর্জন করতে চায়। এই কাজেই তাকে আপনি সহযোগীতা করতে পারেন। আপনার একটু দয়া ও চেষ্টা একটা মানুষের জীবন বাঁচিয়ে দিতে পারে।
এমন কাউকে দেখলে তার সাহায্যে উপস্থিত হোন। তাদের বিচার না করে শুনুন, তাদের আবেগের মূল্য দিন। আত্মহত্যা করা বেশিরভাগ লোকই সমস্যার সমাধানের চেষ্টা করেছে, কাছের মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে এবং সবশেষে নিরাশ হয়ে অক্ষম বোধ করে চূড়ান্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করে।