- করোনা ভাইরাস প্রাদুর্ভাবে সাতক্ষীরা জেলার কৃষির বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ কর্মপরিকল্পনা বিষয়ক সভা জেলার কৃষিবিভাগের সাথে জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়।
উক্ত সভায় জেলা প্রশাসক বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী জেলার কোন জমি যেন অব্যবহৃত না থাকে সে বিষয়ে নির্দেশনা প্রদান করেন। উক্ত সভায় নিম্নোক্ত সিদ্ধান্ত সমূহের মধ্যে, বোরা ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এখন থেকে কর্তন শেষ না হওয়া পর্যন্ত কৃষকদের’কে কারিগরি ও প্রযুক্তিগত সুবিধাসহ সবধরনের সুযোগ সুবিধা প্রদান করতে হবে, জেলায় স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বিভিন্ন প্রকার সবজি ভ্রাম্যমাণ বাজার তৈরি করে নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ন্যায্য মুল্যে বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা করতে হবে, সার, বীজ, কীটনাশক ও কৃষিন্রের যন্রাংশের বিক্রয়কেন্দ্র/দোকান নিরাপদ স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে নির্দিষ্ট সময়পর্যন্ত খোলা রাখার ব্যবস্থা করতে হবে, বোরা ধান কর্তন সময় কৃষিশ্রমিক প্রাপ্তিতে যাতৈ কোন সমস্য না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।
উল্লেখ্য, জেলা প্রশাসক নববর্ষের দিন জেলা প্রশাসকের বাংলোর অব্যবহৃত কৃষি জমি খনন করেন এবং ফেসবুকলাইভ এ সবাইকে অব্যবহৃত কৃষি জমি চাষাবাদে উদ্বুদ্ধ করেন।
শুক্রবার সাতক্ষীরা জেলার প্রতিটি উপজেলায় করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতনতামূলক অভিযান পরিচালনা করা হয়। প্রতিটি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং সহকারী কমিশনারদের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং আনসারের সমন্বয়ে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ও সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিতকরন ও অভ্যান্তিন জোরদার করা হয়েছে।
সামাজিক দূরত্ব বজায় না রাখা ও সরকারি আদেশ অমান্য করে ৬ টার পর দোকান খোলা রাখা এবং বিনা প্রয়োজনে রাস্তায় ঘোরাঘুরি করার অপরাধে জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন অভিযানে সর্বশেষ তথ্যমতে এখন পর্যন্ত ২৮ টি অভিযানে ২৫ টি মামলায় ১৫৬০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এর মধ্যে তালা উপজেলায় ২ টি মামলায় ১০০০ টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৭ টি মামলায় ২২০০ টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ৬ টি মামলায় ৪৯০০ টাকা, আশাশুনি ৩ টি মামলায় ১১০০ টাকা, এবং জেলা প্রশাসনের ১০ মামলায় ৬৪০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত করোনা প্রতিরোধে মোট ১৯৪৮ টি মামলায় ২০ লক্ষাধিক টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয় ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার এর অফিসে ত্রাণ তহবিল খোলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের ত্রাণ তহবিলে জেলা প্রশাসকের ঈদ বোনাস, জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ, জেলা কৃষি বিভাগ তাদের ১ দিনের বেতন সমপরিমান অর্থ ত্রাণ তহবিলে আর্থিক সাহায্য হিসেবে প্রদান করেছেন।
গত ৪/৫ দিনে নারায়নগঞ্জ, মাদারিপুর এবং শরিয়তপুর থেকে সেখানে ঘোষিত লক ডাউনের মধ্যেও ১০ হাজারের মত মানুষ সাতক্ষীরা জেলাতে এসেছে। এদের মধ্যে ২৬৪৩ জনকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানে এবং ৭১১৪ জনকে বাড়িতে কোয়ারেন্টানে রাখা হয়েছে। এর মধ্যে সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৬ জন, শ্যামনগর উপজেলায় ৯৬ জন, কালীগঞ্জ উপজেলায় ১৬০০ জন এবং আশশুনি উপজেলায় ০৩ জন, দেবহাটা উপজেলায় ২৮ জন, তালা উপজেলায় ৯০০ জন প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টানে রয়েছেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং আনসার ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে টহল জোরদার করা হয়েছে। সীমান্তে চেক পোস্ট বসানো হয়েছে। যে সকল মানুষ লক ডাউন উপেক্ষা করে বিভিন্ন জেলা থেকে সাতক্ষীরা জেলা সীমান্তে আসছে তাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া অমানবিক। যারা ফিরে আসছেন তাদের প্রাতিষ্ঠানিক এবং হোম কোয়ারেন্টান নিশ্চিত করতে উপজেলা নির্বাহী অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত এ আদেশ বহাল থাকবে। অমান্যকারীর বিরুদ্ধে প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।
সাতক্ষীরা থেকে করোনা টেস্টের জন্য এ পর্যন্ত ১৯৮ জনের নমুনা পাঠানো হয়েছে। ২২ জনের রিপোর্ট পাওয়া গেছে। আশার কথা হলো সবাই করোনা নেগেটিভ।
করোনা পরিস্থিতিতে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যারা ওয়ার্ড-ইউনিয়ন পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হতে সংকোচবোধ করছে কিন্তু খাদ্য সংকট আছেন এমন মধ্যবিত্ত পরিবারের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বারসহ এসএমএস এর মাধ্যমে সংগ্রহ করছ এখন পর্যন্ত ৫৭৭ পরিবারের মাঝে প্রধানমন্ত্রীর খাদ্য সহায়তা পোঁছে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবার ছাড়াও অনেক অতিরিক্ত এসএমএস ও ফোন দিচ্ছেন। সে কারণে এসএমএসএর মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রমটি বন্ধ রাখা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌর মেয়রের মাধ্যমে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলোর তালিকা করে তাদের বাড়ি বাড়ি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা পৌঁছে দেয়া হবে।
প্রতিটি উপজেলায় ইউনিয়ন ভিত্তিক দুস্থ ও সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের বাহিরে থাকা গরীব মানুষের তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ত্রাণসামগ্রী বিতরণের ক্ষেত্রে নিরাপদ সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে পাওয়া মোট বরাদ্দ থেকে ইতোমধ্যে উপজেলা, পৌরসভার অনুকূলে ৮৫০ মে: টন চাল এবং ৪২ লক্ষ টাকা বরাদ্দ রয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পৌরসভার মেয়েরগণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের মাধ্যমে তালিকা প্রস্তুত করে এই ত্রাণ সহায়তা কর্মহীন হয়ে পড়া দুঃস্থ অসহায় মানুষের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিচ্ছেন। ইতোমধ্যে উপজেলা ও পৌরসভার ৬২৫০০ পরিবারের মাঝে সরকারি ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। সকল সরকারি ত্রাণ বিতরণের ক্ষেত্রে সকলকে ব্যাগের গায়ে “মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহার” কতাটি লিখে দেয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা জেলায় বরাদ্দকৃত ত্রাণ সহায়তা উপজেলা ও পৌরসভা ওয়ারী বন্টন করে দেয়া হয়েছে। সাতক্ষীরা সদর উপজেলায় ১৩৬ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৬,০৩,৫০০/- টাকা, কলারোয়া উপজেলায় ৯২ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪,৩০,০০০/- টাকা, তালা উপজেলায় ১০৫ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪,৭৪,০০০/- টাকা, আশাশুনি উপজেলায় ৯৭ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪,৮৪,০০০/- টাকা, দেবহাটা উপজেলায় ৬৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৩,৩৭,০০০/- টাকা, কালিগঞ্জ উপজেলায় ৯৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪,৬১,৫০০/- টাকা, শ্যামনগর উপজেলায় ১১৬ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৫,৩৫,০০০/- টাকা, সাতক্ষীরা পৌরসভা ১০৮ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ৪,৯৭,০০০/- টাকা এবং কলারোয়া পৌরসভা ৩৪ মেট্রিকটন চাল ও নগদ ১,২৮,০০০/- টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।
সরকারি ত্রাণের তালিকা এবং বিতরণ অনিয়ম স্বজনপ্রীতি ও দূর্ণীতি হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং দুর্নীতি দমন আইনে মামলা করা হবে। এছাড়া, দোকান খুলে দেয়ার কথা বলে স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী দোকানদারদের কাছ থেকে আর্থিক সুবিধা নিচ্ছেন তাদেরকে চিহ্নিত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
ঘরে থাকুন, বার বার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলুন, নিরাপদে থাকুন। আপনি ঘরে থাকলে ভালো থাকবে আপনার পরিবার, ভালো থাকবে জাতি, ভালো থাকবে দেশ। জনস্বার্থে এ সকল কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলে জেলা প্রশাসক জানিয়েছেন।