দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ পাওয়ায় খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আসলাম বাহার বুলবুলকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
রোববার দুপুরে তাকে প্রত্যাহার করে রিজার্ভ অফিসে সংযুক্ত করা হয়। থানায় ওসি না থাকায় বুলবুল ওসির অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করতেন।
এর আগে, রাইসা ক্লিনিকের পরিচালক ডা. আব্দুর রকিব খান (৫৯) রোগীর স্বজনদের হামলায় মারাত্মক আঘাত পাওয়ার পরও খুলনা সদর থানার ওসি তদন্ত মামলা না নেওয়ায় তার পদত্যাগ দাবি করেছিলেন চিকিৎসক নেতারা।
ডা. রকিবের ছোট ভাই খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলামও অভিযোগ করেন হামলার পর সদর থানায় মামলা করতে গেলে ওসি তদন্ত বুলবুল মামলা না নিয়ে বিভিন্ন টালবাহনা করেন।
খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের (কেএমপি) মুখপাত্র ও উপ-পুলিশ কমিশনার শেখ মনিরুজ্জামান মিঠু জানান, খুলনা থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) আসলাম বাহার বুলবুলের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় তাকে রিজার্ভ অফিসে সংযুক্ত করা হয়েছে। হরিণটানার ওসি আশরাফ হোসেনকে খুলনা থানার ওসি হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
জানা যায়, ডা. রকিবের হত্যার ঘটনার সব আসামিদের গ্রেফতার ও খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) আসলাম বাহার বুলবুলের প্রত্যাহারের দাবিতে বুধবার থেকে সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের চিকিৎসকরা কর্মবিরতি শুরু করেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে প্রধান আসামিসহ উল্লেখযোগ্য এজাহারভুক্ত আসামি গ্রেফতার হওয়ায় বৃহস্পতিবার সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৭২ ঘণ্টার জন্য তাদের কর্মবিরত স্থগিত করেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুন) দুপুর ২টায় খুলনা প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের খুলনার সভাপতি ও সংগঠনের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি ডা. শেখ বাহারুল আলম ৭২ ঘণ্টার মধ্যে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আসলাম বাহার বুলবুলের প্রত্যাহার ও হত্যা মামলার প্রধান আসামিসহ সব আসামি গ্রেফতারের আল্টিমেটাম দেন।
উল্লেখ্য, নগরীর মোহাম্মদ নগরের পল্লবী সড়কের বাসিন্দা আবুল আলীর স্ত্রী শিউলী বেগমকে ১৪ জুন সিজারের জন্য রাইসা ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। ওই দিন বিকেল ৫টায় অপারেশন হয়। বাচ্চা ও মা প্রথমে সুস্থ ছিলেন। পরে রোগীর রক্তক্ষরণ হলে ১৫ জুন সকালে খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে চিকিৎসকরাও রোগী রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে না পেরে ঢাকায় পাঠায়। ঢাকায় নেওয়ার পথে ১৫ জুন রাতে শিউলী বেগম মারা যান।
এ ঘটনায় নিহত রোগীর স্বজনরা ১৫ জুন রাত ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে ডা. রকিবকে লাথি ঘুষি ও লাঠি দিয়ে আঘাত করে। এতে তার মাথার পেছনে জখম হয়। তাকে প্রথমে গাজী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে তার অবস্থার অবনতি হলে শেখ আবু নাসের হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে আইসিইউতে ১৬ জুন চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
বুধবার (১৭ জুন) নিহতের ছোট ভাই খুলনা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রভাষক সাইফুল ইসলাম বাদি হয়ে খুলনা সদর থানায় মামলা দায়ের করেন। হত্যার ঘটনায় চারজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরেও ১০ জনকে আসামি করে হত্যা মামলা করা হয়।