করোনাভাইরাস আতঙ্কের কারণে খুলনার সরকারি বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক যেখানে সাধারণ রোগী দেখা বন্ধ করে দিয়েছে। সেখানে খুলনা জেলার পল্লী চিকিৎসকরা, গ্রাম্য ডাক্তার (আরএমপি) ঝুঁকি নিয়ে নিয়মিত গ্রামের সাধারণ রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন দিনে রাতে সব সময়।
অনেকে করোনা প্রতিরোধে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) ছাড়াই রোগীদের সেবা দিয়ে আসছেন তাঁরা। এতে করে চিকিৎসক, রোগীসহ সাধারণ মানুষ করোনা ঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানা গেছে।
সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে পাইকগাছা উপজেলার আগড়ঘাটা বাজারে যেয়ে দেখা যায়, পল্লী চিকিৎসক সিরাজুল ইসলাম নির্ভর যোগ্য সুরক্ষা উপকরণ পরেই চিকিৎসা দিচ্ছেন রুগীদের। তার চেম্বারে আরও ৮-১০ জন রোগী রয়েছেন চিকিৎসা সেবা নেয়ার জন্য। স্বাস্থ্য বিধি মেনেই তারা সরাসরি চেম্বার অথবা অপেক্ষামানকক্ষেই বসে আছেন। এ সময় তার সাথে কথা বললে তিনি বলেন, করোনাভাইরাস ঝুঁকিতে খুব সতর্কতার সাথে ২/৫জন রোগীর সেবা দিয়ে বাড়ীতে থাকার চেষ্টা করি। কিন্তু রোগীরা শোনে না, আমি চেম্বারে আসতে বা রোগী দেখতে না চাইলে বাড়িতে গিয়ে ভীড় করছে। বর্তমান সময়ে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিকে কোন যথাযথ সেবা না পায়ায় অনুপায় হয়ে ঐ সব রুগীকে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিতে হয় আমাদের। অনেক সময় রোগীদের বাড়ীতে যেতে হচ্ছে। গড়ে প্রতিদিন বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত ২০ টি রুগীকে প্রাথমিক চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছি। সরকার বা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফ থেকে কোনো সহায়তা, সুরক্ষা উপকরণ না পাওয়ায় চরম ঝুকির মধ্যে থাকার কথাও জানান তিনি।
এ ব্যাপারে গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির সভাপতি বলেন, করোনা ভাইরাস ঝুঁকিতে রয়েছে জেলার পাচ হাজারের উর্দ্ধে গ্রাম্য ডাক্তার। তিনি বলেন জেলার শতকরা ৮০ জন রুগীকে বর্তমান প্রাথমিক ভাবে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে আমাদের গ্রাম্য ডাক্তারদের। করোনা মোকাবেলায় সরকার ও স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের গ্রাম ডাক্তারদের দিকে কোন সুনজর দেই নি। আমাদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ায় আহবান জানাচ্ছি। কারণ এখন গ্রাম অঞ্চলের বেশির ভাগ রোগীই জ্বর, ঠাণ্ডা, কাশির লক্ষণ রয়েছে। তবে গ্রাম ডাক্তার কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে সবাইকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে চিকিৎসা সেবা প্রদানের কথা বলা হয়েছে।
অবস্থাদিষ্টে করোনা আতঙ্কে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার ফলে বেশির ভাগ রোগীই চিকিৎসা নিতে ভিড় করছেন পল্লী চিকিৎসকের দ্বারে। সারা দেশ কার্যত লকডাউনে থাকায় বিভিন্ন শহরের লোকজন এখন গ্রামের বাড়িতে অবস্থান করছেন। এ কারণে গ্রামের চিকিৎসকদের রোগীর সংখ্যা বাড়ছে প্রতিনিয়ত। অথচ দু’একজন ছাড়া গ্রাম ডাক্তারগণ করোনাকে মোকাবেলা করছে ব্যক্তি সুরক্ষা উপকরণ পিপিই, গ্লাভস, মাস্ক এবং অন্য কোনো সাপোর্ট ছাড়াই তারা রোগীদের সেবা দিয়ে চলছেন নিরলস ভাবে।
এ ব্যাপারে খুলনা সিভিল সার্জন বলেছেন, আমরা গ্রাম ডাক্তারসহ সকলকেই করোনা ভাইরাস সম্পর্কে সচেতনতার সাথে কাজ করতে বলেছি। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে তারা রুগীদের চিকিৎসা দিবেন। তবে স্বাস্থ্য বিভাগ থেকে গ্রাম্য ডাক্তারদের জন্য কোনো সুরক্ষা উপকরণ দেওয়ার সুযোগ নেই বলেও জানান তিনি।