করোনাভাইরাস সংক্রমণ রোধে সরকারি নির্দেশে প্রায় তিন মাস বন্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান; শ্রেণীকক্ষের চেহারা ভুলতে বসেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। পড়ালেখা বন্ধ প্রায়। সন্তানের ভবিষ্যৎ নিয়ে কর্মহীন নিম্ন ও মধ্যবিত্ত অভিভাবকরা চরম উদ্বিগ্ন। এর মধ্যে স্কুলের টিউশন ফিসসহ যাবতীয় বকেয়াদি পরিশোধে মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা পেয়ে উদ্বিগ্ন উপার্জনহীন অভিভাবকরা। সরকারি নিদের্শনা উপেক্ষা করেই টিউশন ফিস দাবি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।
করোনাভাইরাসের কারণে গত ১৮ মার্চ থেকে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় সবাই কমবেশি সমস্যায় পড়েছে। একদিকে পড়াশোনার ক্ষতি, অন্যদিকে আর্থিক সংকট। বিশেষ করে বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সমস্যাটি বেশি। অভিভাবকেরাও আর্থিক সমস্যায় আছেন। এজন্য বিদ্যমান পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর ও শিক্ষা বোর্ডের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ না দিতে প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি আহক্ষান জানানো হয়েছিল। কিন্তু খোদ বিভাগীয় শহর খুলনার কোনো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ফি আদায় করছে। কেউ কেউ তাগাদাও দিচ্ছে। মোবাইলে ক্ষুদে বার্তা দিয়ে এপ্রিল, মে ও জুন মাসের বেতন আদায় শুরু করেছে। মুঠোফোনভিত্তিক আর্থিক সেবার (বিকাশ, রকেট, নগদ পে) মাধ্যমে তারা কয়েকদিন ধরে এই টাকা আদায় শুরু করেছে। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ফি আদায় করায় অভিভাবকেরা ক্ষুব্ধ। আবার ফি’র অভাবে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সংকটে বলে দাবি বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকদের।
কলেজিয়েট স্কুলের (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) একজন অভিভাবক বলেন, নানা কৌশলে ফি আদায়ে চাপ দেয়া হচ্ছে। যেমন কলেজ শাখার পক্ষ থেকে একাদশ শ্রেণীর ছাত্রীদের খুদে বার্তা পাঠিয়ে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় এখনো দ্বাদশ শ্রেণী ‘প্রমোশন’ দেয়া সম্ভব হয়নি। বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘অটোপ্রমোশন’ ছাড়া বিকল্প নেই। তাই বর্তমান মাস পর্যন্ত বেতন পরিশোধ করলে ‘অটো প্রমোশনের’ জন্য কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হবে। জুনের মধ্যে বেতন পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।
ওই অভিভাবক বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে বেশির ভাগ অভিভাবক অর্থসংকটে আছেন। এ অবস্থায় অন্তত ছয় মাস বেতন মওকুফ করে প্রয়োজনে সরকার থেকে প্রণোদনা দিয়ে সমস্যা মেটাতে পারে।
নেভী এ্যাংকরেজ স্কুলে গত মাস থেকে বিকাশের মাধ্যমে শিক্ষার্থী ফি আদায় করছে। এখন ব্যাংক ও বিকাশের পাশাপাশি স্কুলে গিয়েও বেতন দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। আর ফি’র জন্য অভিভাবকদের তাগাদা দিয়ে অভিভাবকদের মুঠোফোনে খুদে বার্তা দেয়া হচ্ছে। অনুরূপ খুদে বার্তা দিয়েছে বিজিবি পরিচালিত স্কুলও।
একাধিক অভিভাবকের অভিযোগ, করোনাকালে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শিক্ষা ফি (টিউশন ফি) আদায়ে চাপ না দিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হলেও কোনো কোনো প্রতিষ্ঠান এই সময়েও শিক্ষা ফি আদায় করছে, তাগাদাও দিচ্ছে। কেউ আদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। প্রতিদিন চাল-ডালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য-দ্রব্যের দাম বাড়ছে। ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ বিলসহ আনুষাঙ্গিক সকল খরচ মিটাতে ত্রাহী অবস্থা।’ অভিভাবকদের কেউ কেউ বলছেন, যেহেতু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস-পরীক্ষা নেই। তাই কয়েক মাসের শিক্ষা ফি মওকুফ করে প্রয়োজনে সরকার ভুর্তকি দিয়ে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতনের সমস্যা মেটাতে পারে।
তবে এসব ব্যাপারে কোন মন্তব্যই করতে চাচ্ছেন না বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষকরা।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক জানান, তাঁরা প্রতিষ্ঠানগুলোকে এই সময়ে বেশি মানবিক হতে বলেছেন। শিক্ষার্থী ফি আদায়ে চাপ দেয়া যাবে না। সূত্র : সময়ের খবর