খুলনায় বেসরকারি হাসপাতালে ব্যবস্থা নেই করোনা চিকিৎসার

খুলনার চিত্র ডেস্কঃ
  • প্রকাশিত : সোমবার, ২২ জুন, ২০২০

এক মাসেও বাস্তবায়ন হয়নি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা

দেশের সকল বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড ও নন কোভিড চিকিৎসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নির্দেশনা বাস্তবায়ন হয়নি খুলনাতে। নির্দেশনার প্রায় এক মাস অতিবাহিত হলেও কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে প্রয়োজনীয় জনবল ও অবকাঠামো কোনটাই বাস্তবায়ন হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সারা দেশের ন্যায় খুলনায়ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো স্বাস্থ্য সেবায় অর্ধেক এর বেশি ভূমিকা রাখে। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে জনবল ও অবকাঠামোর অভাবে বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলো তেমন কোন সেবা দিতে পারছে না। ফলে দিনরাত পরিশ্রম করেও হিমশিম খাচ্ছে সরকারি হাসপাতালগুলো।

খোঁজ নিয়ে জানাযায়, করোনা চিকিৎসার জন্য খুলনার একমাত্র হাসপাতালে ৮০টি বেডের ব্যবস্থা রাখার কথা থাকলেও শনিবার পর্যন্ত সেখানে ছিল মাত্র ৬০ জন। করোনা পরিস্থিতি বিবেচনায় দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালকে করোনা চিকিৎসা শুরুর নির্দেশ দিয়েছে সরকার। গত ২৪ মে এ সংক্রান্ত একটি চিঠি দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তবে খুলনার বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে এ আদেশ বাস্তবায়ন নিয়ে সন্দিহান হাসপাতাল মালিকরা। তারা বলছেন প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ছাড়া শুধু আদেশ দিলে বেসরকারি হাসপাতালে করোনা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ বেসরকারি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো ও জনবল কোনটিই নেই।

প্রাইভেট হাসপাতাল মালিকদের সংগঠন সূত্রে জানা যায়, খুলনায় বেসরকারি পর্যায়ে হাসপাতাল ক্লিনিক-এর সংখ্যা শতাধিক হলেও মাত্র ৪টি প্রতিষ্ঠানে ৫০ বা তার থেকে বেশি শয্যা আছে। এর মধ্যে গাজী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, খুলনা সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও আ-দ্বীন আকিজ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। অপরটি হল ইসলামী ব্যাংক হাসপাতাল। এর বাইরে বড় বড় কয়েকটি হাসপাতাল যেমন নার্গিস মেমোরিয়াল হাসপাতাল, গরীব নেওয়াজ হাসপাতালসহ বেশ কয়েকটি হাসপাতাল ৫০-এর কাছাকাছি রোগী ভর্তি রাখলেও এদের কারোই অনুমোদন ১০ বা ২০ বেডের বেশি না। যে চারটি প্রতিষ্ঠানে সরকারি চিঠি এসেছে তাদের কোন প্রতিষ্ঠানেরই অবকাঠামো ও জনবল কিছুই নেই। খুলনায় করোনা চিকিৎসার জন্য ডেডিকেটেড একমাত্র সরকারি হাসপাতালে একজন চিকিৎসক একটানা ১০ দিন চিকিৎসা দেন, এরপর টানা ১৪ দিন কোয়ারেন্টাইনে যান। পরবর্তিতে সেখান থেকে ৭ দিন বাড়িতে সময় কাটানোর পর আবার হাসপাতালে এসে যোগদান করেন। এতে করে নিয়মিত জনবলের তিনগুণ জনবল প্রয়োজন হয়। সরকারি হাসপাতালে জনবলের ঘাটতি মেটাতে ইতোমধ্যে ২২ জন চিকিৎসক ও ৯১ জন নার্স নিয়োগ দেয়া হয়েছে খুলনায়।

এদিকে প্রয়োজনের তুলনায় জনবল তুলনামূলক অনেক কম নিয়ে কার্যক্রম পরিচালনা করে বেসরকারি হাসপাতালগুলো। তিনগুণ জনবল এই মুহূর্তে নিয়োগ দিয়ে তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল মালিকরা।

এছাড়া একই ভবনে কোভিড ও নন কোভিড রোগীদের চিকিৎসার যে কথা বলা হয়েছে তা নিয়েও আপত্তি তুলেছেন হাসপাতাল মালিকরা। কোন হাসপাতালে কোভিড রোগী ভর্তি করলে অন্য রোগী সেই হাসপাতালে আসতে চাইবেন না। ফলে সাধারণ রোগীরাও সেবা বঞ্চিত হয়ে কম মানসম্পন্ন হাসপাতালে গিয়ে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

সরেজমিন খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, বড় চারটি হাসপাতালের কোনটিতেই সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে এখন পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। তারা বলছেন, কোভিড ও নন কভিড রোগীদের আলাদা আলাদা প্রবেশ ও বাহির পথ না থাকায় কোন ব্যবস্থা নিতে পারেননি তারা।

বেসরকারি হাসপাতাল মালিক সমিতির সভাপতি ডাঃ গাজী মিজানুর রহমান বলেন, করোনা চিকিৎসায় সরকারি নির্দেশনা যাতে খুলনার বেসরকারি হাসপাতাল মালিকরা পালন করতে পারে সেজন্য সরকারকেই এগিয়ে আসতে হবে। প্রয়োজনীয় জনবল ও যোগানও দিতে হবে। পিসিআর মেশিন সংগ্রহ করতে হবে। কোভিড, নন কভিড নয় প্রয়োজনে সরকার পুরো হাসপাতাল করোনা চিকিৎসার জন্য সংযুক্ত করতে পারবেন। কিন্তু আর্থিক ও জনবল সব ধরনের সহযোগিতা ছাড়া বেসরকারি পর্যায়ে করোনা চিকিৎসা দেয়া সম্ভব নয়। সূত্র : সময়ের খবর

সংশ্লিষ্ঠ আরও খবর