করোনাভাইরাস মোকাবেলায় খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের সমন্বয় না থাকায় জনদুর্ভোগ বাড়ছে দিন দিন। আক্রান্ত রোগীরা সুস্থ হলেও দ্বিতীয় নমুনা দেয়ার জন্য বারবার ফোন দিয়ে সারা মিলছে না। নতুন করে যাদের করোনা শনাক্ত হচ্ছে, সময়মত প্রশাসনের সহযোগিতা নিয়ে তাদের বাড়ি লকডাউন হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে খুমেক ল্যাবের দেয়া তথ্যের সাথেও মিল হচ্ছে না। ফলে সমন্বয়হীনতা তৈরি হচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে।
খুলনা সিভিল সার্জন অফিসের অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ-এর মাধ্যমে জানাযায়, গত ২৪ ঘন্টায় (গত মঙ্গলবার সকাল থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত) খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৫৮ জন। অন্যদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ ল্যাব থেকে পাওয়া তথ্য মতে খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৬২।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৩ এপ্রিল প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় খুলনায়, বুধবার রাত ৯টা পর্যন্ত খুলনায় করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ১৩৬২ জন। এর মধ্যে এ পর্যন্ত মোট সুস্থ হয়েছে ১৩৪ জন আর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ৫১ জন। এর বাইরে ১ হাজারের বেশি করোনা আক্রান্ত রোগী রয়েছেন, যারা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নথি পর্যালোচনা করে দেখা যায়, ২৪ জনসহ গত ১০ জুন পর্যন্ত খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগী ছিল ২৪২, যারা ইতোমধ্যে সুস্থ হয়েছেন। তবে তাদের অনেকেই এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় নমুনা দিতে পারেননি। কীট সংকটের কারণে সিভিল সার্জন অফিস তাদের নমুনা নিতে পারছে না। এতে এসব বাড়ির বাসিন্দাদের লকডাউন না তোলায় তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
গত ৯ জুন সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকার বাসিন্দা আবুল কমান্ডারের কভিড ১৯ পজেটিভ হয়, বর্তমানে তিনি পুরোপুরি সুস্থ রয়েছেন। কিন্তু একাধিকবার ফোন দিয়েও দ্বিতীয়বার এ নমুনা দিতে পারেননি তিনি। গোবর চাকা মেইন রোড এলাকার বাসিন্দা একবার নেগেটিভ হওয়ায় তিনি কর্মস্থলে যোগ দিয়েছেন। তবে তার বাড়ির লকডাউন এখনও উঠেনি। এ অভিযোগ গত ১০ দিন আগে আক্রান্ত হওয়া বড় একটা অংশের রোগীদের।
এদিকে সিভিল সার্জন অফিসের কর্মকর্তাদের মধ্যেও সমন্বয়হীনতায় দুর্ভোগ বাড়ছে সাধারণ রোগীর মধ্যে। গত ২১ জুন নগরীর শান্তিধাম মোড় এলাকার এক বাসিন্দা তার নমুনা নেয়ার জন্য একাধিকবার ফোনে সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদকে অনুরোধ করেন কিন্তু তিনি (সিভিল সার্জন) ডাঃ সাদিয়া মনোয়ারা উষা নামে এক চিকিৎসকের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন। অন্যদিকে ডাঃ উষার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি স্যাম্পল সংগ্রহকারী টেকনোলোজিস্ট মোঃ রায়হানের মোবাইল নম্বর দিয়ে যোগাযোগ করতে বলেন। এ পর্যায়ে ভুক্তভোগী রোগী রায়হানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন আমি উষা ম্যাডামের আন্ডারে না, আমি ফারহানা ম্যাডামের আন্ডারে। আপনারা তার (উষা ম্যাডাম) সাথে যোগাযোগ করেন। এরপর তার কাছ থেকে নম্বর নিয়ে ডাঃ ফারহানার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি (চিকিৎসক) এই রোগীর স্বজনকে হয়রানির পাশাপাশি বলেন দায়িত্বে আমি আপনারা কেন ডাঃ উষা এবং সিভিল সার্জনের সাথে যোগাযোগ করেছেন। এক পর্যায়ে নমুনা নেয়ার ক্ষেত্রে নানা টালবাহানা করেন বলে জানান রোগীর স্বজনরা। পরে বিষয়টি সিভিল সার্জনের গোচরে আনলে তিনি নিজে নমুনা সংগ্রহকারী রায়হানের সাথে কথা বলে তাকে (রোগী) নমুনা দিতে পাঠান। এ ঘটনায় সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদের চেইন অব কমান্ড নিয়ে প্রশ্ন ওঠে ঐ রোগী ও তার স্বজনদের মধ্যে।
সিভিল সার্জন ডাঃ সুজাত আহমেদ বলেন, কোন সমন্বয়হীনতা নেই, জুনিয়র চিকিৎসকরা দিন-রাত পরিশ্রম করছে। তবে রোগী হয়রানির কোন খবর পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া কীট সংকটের কারণে নমুনা সংগ্রহে কিছুটা বাধাগ্রস্ত হচ্ছে আশাকরি আগামীকালের (বৃহস্পতিবার) মধ্যে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। সূত্র : সময়ের খবর