খুলনায় করোনা আক্রান্তে চারজনের মৃত্যু, উপসর্গে প্রাণ গেল দু’জনের

খুলনার চিত্র ডেস্কঃ
  • প্রকাশিত : সোমবার, ৬ জুলাই, ২০২০

বিভাগে শনাক্তের সংখ্যা সাড়ে ৫ হাজার ছাড়িয়েছে

খুলনার করোনাভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্তে একদিনে চারজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এদিন উপসর্গ নিয়ে আরও দু’জন মারা গেছেন। খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, করোনা হাসপাতাল ও জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থার তাদের মৃত্যু হয়। এদিকে গত ২৪ ঘণ্টার খুমেকের আরটি-পিসিআর ল্যাবে আরও ১২০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। সোমবার রাতে সংশ্লিই সূত্রগুলো এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

খুলনা করোনা হাসপাতালের ভোকালপার্সন ডাঃ শেখ ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, সোমবার চিকিৎসাধীন অবস্থায় দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন সহিদুর রহসান সহিদ ও মোঃ নজরুল ইসলাম। মৃতদের মধ্যে সহিদ নগরীর সোনাডাঙ্গা ঈদগাহ এসাকার বাসিন্দা ও সোনাডাঙ্গা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডাঃ মুন্সি রেজা সেকান্দার জানান, সোমবার ভোর ৭টার দিকে হানিফ শেখ (৫০) নামে একজন করোনা রোগী চিকিৎসাধীন অবস্থার মারা গেছেন। তিনি নগরীর খানজাহান আলী রোডের মৃত লুৎফর শেখের ছেলে। গত ২ জুলাই থেকে জ্বর, শ্বাসকষ্ট সমস্যা নিয়ে আইসোলেশন ইউনিটে ভর্তি ছিলেন তিনি। পরে তার অবস্থা খারাপ হলে আইসিইউতে নেওয়া হয়। সেখানেই তিনি মারা যান। তার নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছিল।

তিনি আরও জানান, হাসপাতালের আইসোলেশন ইউনিটে করোনার উপসর্গ নিয়ে দুইজনের মৃত্যু হয়েছে। মৃতরা হলেন বাগেরহাটের মোড়েলগঞ্জ থানাধীন তাপডা গ্রামের মৃত ইজ্জত আলী খানের ছেলে আবেদ আলী খান (৭৪) ও নগরীর রায়েরমহল এলাকার সৈয়দ আলতাব হোসেনের ছেলে সৈয়দ ইমাম হাসান বাচ্চু (৫৫)।

গত রবিবার বিকাল ৪টা থেকে স্বর শ্বাসকস্ট সমস্যা নিয়ে ভর্তি ছিলেন আবেদ আলী খান। সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থার ভোর ৬টার দিকে তিলি মারা যান। এছাড়া ইমাম হাসান বাচ্চু জ্বর শ্বাসকস্ট সমস্যা নিয়ে রবিবার সন্ধ্যায় হাসপাতালে ভর্তি হন। পরে অবস্থার অবনতি হলে আইসিইউতে নেয়া হয়। সেখানেই তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুর পৌনে ১২টার দিকে মারা যান। মৃতরা করোনা আক্রান্ত ছিলেণ কি না তা পরীক্ষার জন্য তাদের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে দিঘলিরা ইউএনও মো. হাফিজ-আল-আসান জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্তে উপজেলা প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম সারোয়ার খান (৫৮) ইন্তেকাল করেছেন। সোমবার ভোর ৬টায় খুলনা সদর হাসপাতালের ফ্লু কর্নারে তিনি মারা যান।

এদিকে খুলনা নেডিকেল কলেজের উপাধাক্ষ ডাঃ মেহেদী নেওয়াজ জানান, সোমবার খুমেকের আরটি-পিসিআর মেশিনে মোট ২৮১ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে খুলনার নমুনা ছিলো ১৮৬টি। এদের মধ্যে মোট ১২০ জনের নমুনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজেটিভ এসেছে। যার ৮৬ জন মহানগরীসহ খুলনা জেলার। এছাড়া সাতক্ষীরা জেলার ২৫ জন, যশোরের ৭ জন, পিরোজপুর ও গোপালগঞ্জের ১ জন করে রয়েছেন।

খুলনা বিভাগে করোনা শনাক্ত : খুলনা বিভাগে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ১৭০ জন কোভিড রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এ নিয়ে খুলনা বিভাগে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্তের সংখ্যা হয়েছে ৫ হাজার ৫১২। বিভাগের মোট রোগীর ৪৬ শতাংশ খুলনার। এর মধ্যে আবার শুধু খুলনা নগরের ১ হাজার ৯৯৭ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় ২ জনের মৃত্যু হয়েছে। মোট মৃত্যু বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৩ জনে।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্রশাসন) মোঃ মনজুরুল মুরশিদ সোমবার এসব তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

বিভাগের মধ্যে চুয়াডাঙ্গায় প্রথম কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয় গত ১৯ মার্চ। পরবর্তী ৭৩ দিনে শনাক্তের সংখ্যা ৫০০ ছাড়ায়। সোমবার ১১০তম দিনে এসে রোগীর সংখ্যা সাড়ে ৫০০০ ছাড়াল। নতুন শনাক্ত ১৭০ জনের মধ্যে খুলনা জেলায় ৯৩ জন, বাগেরহাটে ২ জন, যশোরে ২ জন, নড়াইলে ১ জন, ঝিনাইদহে ১৮ জন, কুষ্টিয়ায় ৩৭ জন এবং চুয়াডাঙ্গায় ১৭ জন রয়েছেন। এই সময়ে সাতক্ষীরা, মাগুরা ও মেহেরপুরে একজনও সংক্রমিত হননি।

বিভাগে মারা যাওয়া লোকজনের মধ্যে খুলনায় সবচেয়ে বেশি ৩৪ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া যশোরে ১৩, কুষ্টিয়ায় ১৪, নড়াইলে ৭, মেহেরপুর ও ঝিনাইদহে ৫ জন করে, সাতক্ষীরা, মাগুরা ও বাগেরহাটে ৪ জন করে এবং চুয়াডাঙ্গায় ৩ জন মারা গেছেন।

খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্যমতে, বিভাগে নতুন করে ৯০ জন সুস্থ হয়েছেন। এ নিয়ে সুস্থ হলেন ১ হাজার ৭৪২ জন। শনাক্ত বিবেচনায় বিভাগে সুস্থ হওয়ার হার প্রায় ৩২ শতাংশ। সুস্থ হওয়া লোকজনের মধ্যে খুলনায় ৪৯৯, বাগেরহাটে ১০২, সাতক্ষীরায় ৬৮, যশোরে ২৬৮, ঝিনাইদহে ১১৪, মাগুরায় ৫৩, নড়াইলে ৮৭, কুষ্টিয়ায় ৩৬৯, চুয়াডাঙ্গায় ১৪৮ ও মেহেরপুরের ৩৪ জন রয়েছেন।

সংশ্লিষ্ঠ আরও খবর