বলিউডে ‘নেপোটিজম’, দলবাজি নতুন কোনো বিষয় নয়। বহু তারকাই বলিউডের এই ‘ট্রেন্ড’-এর শিকার হয়েছেন। কেউ এর বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন, কেউ আবার চুপ থেকে গিয়েছেন। অনেকের ক্যারিয়ার যেমন বলিউড গড়েছে, তেমনই বলিউডের অন্দরে এমন কথাও প্রচলিত আছে যে, অনেকের ক্যারিয়ার শেষও করে দিয়েছে। যার নেপথ্যে রয়েছে এই নেপোটিজম বা স্বজনপোষণ এবং দলবাজি।
অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকে নেপোটিজমের অভিযোগ সবচেয়ে বেশি করে উঠেছে কারন জোহর, সালমান খানসহ আরও বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। অভিযোগ- তারা শুধু স্টার-কিডদেরই বেশি স্পেস দেন। ফ্লপ হলেও পরের ছবিতে অভিনয়ের সুযোগ পেয়ে যান তারকা বাবা-মায়ের সন্তানরা। যদিও এ নিয়ে দ্বিমত রয়েছে। তবে বলিউডে যার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ, তিনি হলেন কারন জোহর [কেজে]। অভিযোগ, অনেকের ক্যারিয়ার বরবাদ করে দিয়েছেন কেজে। তবে আজ থেকে নয়, অনেক আগে থেকেই কেজের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠছে।
‘নেপোটিজম’ বা স্বজনপোষণ নিয়ে এখনও উত্তাল ভারতের সামাজিক মাধ্যম, একের পর এক অভিযোগ চলছেই, বিরূপ মন্তব্যের ঝড় বয়ে যাচ্ছে বলিউডের স্টারকিডদের নিয়ে।
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর বলিউডে একদিকে স্বজনপ্রীতি আর অন্যদিকে নবাগতদের প্রতি বিরূপ আচরণের অভিযোগ এখন তুঙ্গে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের নামে মামলাও হয়েছে। কারন জোহর, আলিয়া ভাটসহ অনেক বলিউড তারকার সামাজিক মাধ্যমে ফলোয়ারের সংখ্যা কমে গেছে। পাশাপাশি তারকা পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে তারা বলিউডে টিকে আছেন, এমন অভিযোগও রয়েছে অনেকের নামে। সব মিলিয়ে তারকা পরিবারে জন্ম নেওয়া অভিনেতা-অভিনেত্রীরা এখন বেশ অস্বস্তিতে আছেন। সুশান্ত সিং রাজপুত মারা যাওয়ার পর যখন বি টাউনে আগুন জ্বলছে, ঠিক এই পরিস্থিতিতে সোনাক্ষী সিনহা টুইটারে লিখলেন, ‘আগুন লাগুক, আমি মজায় আছি!’ আর সেই পোস্ট করেই নিজের টুইটার অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভ করে দেন সোনাক্ষী। তিনি নিজেও একজন ‘স্টারকিড’। স্বাভাবিকভাবেই, এমন মন্তব্য করে বিতর্কে জড়িয়েছেন তিনি। অনেকে তার দিকে তীব্র প্রশ্নবাণ ছুড়ে দেন। তারকা পরিবারের সন্তান হওয়ায় তিনি যে ইন্ডাস্ট্রিতে কাজ পান তা নিয়ে অনেকেই অভিযোগ তোলেন। তা ছাড়া অনেকেই তাকে সালমানের ‘খাস’ লোক বলে তোপ দাগান। এমন ধাক্কা সামলাতে না পেরে অবশেষে সামাজিক মাধ্যম টুইটার থেকে বিদায় নিলেন সোনাক্ষী। এ অভিনেত্রীর টুইটারে ফলোয়ার সংখ্যা ছিল এক কোটি ৮৫ লাখ। তার টইটার ডিঅ্যাকটিভ করার আগেই নিজের অবস্থান পরিস্কার করেন। শেষ টুইটে তিনি লেখেন, ‘মানসিক শান্তি পেতে আমি টুইটার থেকে বিদায় নিলাম। এ মুহূর্তে নেতিবাচক চিন্তাধারা থেকে দূরে থাকা প্রয়োজন। অ্যাকাউন্ট ডিঅ্যাকটিভেট করলাম। আপনারা শান্তিতে থাকুন।’
সুশান্তের মৃত্যুর পরই একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়। যেখানে দেখা যাচ্ছে, সুশান্ত সিং রাজপুতকে চেনেননি অভিনেত্রী সোনম কাপুর। এ অভিনেতার মৃত্যুর পর এ ভিডিও ভাইরাল হয়ে যায়। তারকা পরিবারে জন্ম নেওয়ার কারণে মনের মধ্যে অহংবোধ জন্মিয়েছে বলে সোনমকে সমালোচকরা বিব্রত করেন। অনেকেই বলেন, বাবা অনিল কাপুরের কারণে ক্যারিয়ার গড়তে পেরেছেন সোনম। সামাজিক মাধ্যমে তাকে ব্যক্তিগতভাবে মেসেজ করে অশ্নীল ভাষায় আক্রমণ করেছেন বেশ কয়েকজন। যেখানে সোনমের মৃত্যুকামনা থেকে শুরু করে তার অনাগত সন্তানেরও মৃত্যুকামনা করা হয়েছে। এই মেসেজগুলোর বেশ কয়েকটি স্ট্ক্রিনশট শেয়ার করে সোনম তার পোস্টে লেখেন, ‘আমি আমার এবং বাবা-মায়ের কারণে কমেন্ট সেকশন বন্ধ করেছি। কারণ আমি চাই না আমার ৬৪ বছরের বাবা এসব খারাপ কথা শুনুক। এগুলো ওদের প্রাপ্য নয়। আমার অনাগত সন্তানের মৃত্যুকামনা করছে মানুষ, অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিচ্ছে, আজ আমরা এখানে আমাদের কর্মের জন্য। যারা ঘৃণা ছড়াচ্ছে, তারা আজ সে জায়গায় তাদের নিজেদের কর্মের জন্য। এসব করে নিজেদের জীবন নষ্ট করছেন আপনারা।’
ভাইরাল হওয়া ভিডিও প্রসঙ্গে সোনম জানান, ‘সাত বছরের পুরোনো একটি ভিডিও ওটা। সুশান্তের তখন একটি মাত্র ছবি মুক্তি পেয়েছিল। তখন সত্যি ওকে চিনতাম না।’ এতদিন ইনস্টাগ্রামে চার কোটি ৮৪ লাখ ফলোয়ার ছিল আলিয়া ভাটের। সুশান্তের মৃত্যুতে তিনি যখন শোক প্রকাশ করেন, তখন অনেকেই তাকে সমর্থন করেন। কিন্তু তারপরই স্বজনপোষণ নিয়ে বিতর্ক শুরু হলো, আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হন আলিয়া। বাবা মহেশ ভাটের মেয়ে বলেই তিনি বলিউডে রাজত্ব করছেন আর সুশান্ত বাইরে থেকে এসেছিলেন বলেই তাকে অকালে চলে যেতে হলো, এমন অভিযোগ উঠতে শুরু করে। আলিয়ার শোকবার্তা নিয়েও কাটাছেঁড়াও শুরু হয়। বলা হয়, সুশান্তের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করলেও এক সময় কারন জোহরের সঙ্গে মিলে টকশোতে সুশান্তকে ধর্তব্যের মধ্যেই আনতে চাননি তিনি। সুশান্তকে নিয়ে কারন জোহরের সঙ্গে তার কথোপকথনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। তাতেই গত কয়েক দিনে ১০ লাখের বেশি ফলোয়ার আলিয়াকে আনফলো করেন। এই মুহূর্তে ইনস্টাগ্রামে চার কোটি ৭৪ লাখ ফলোয়ার রয়েছে আলিয়ার। এই তিনজন অভিনীত ছাড়াও একাধিক স্টারকিড সাধারণ দর্শকের রোষানলের শিকার হচ্ছেন। একটি মৃত্যু যে তাদের জীবনে এমন বিরূপ পরিস্থিতি নিয়ে আসবে, তা কি আঁচ করতে পেরেছিল কেউ?